তৎকালীন সমাজের কুসংস্কার ও বিধবা নারীদের অবহেলার চিত্র ‘বিলাসী’

দিনাজপুর বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসর।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একজন বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার। তিনি সাধারণত শহর ও গ্রামের বাঙালি পরিবার ও সমাজের জীবন সম্পর্কে লিখতেন। তিনি সামাজিক অসংগতি, মানবিকতা, নারী জীবনের দুঃখ-কষ্ট ও সংবেদনশীল বিষয়কে তাঁর লেখায় অসাধারণভাবে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর গল্পগুলো সাধারণ মানুষের জীবন, বেদনা, সংগ্রাম ও সমাজের কুপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সমৃদ্ধ। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয়তার জন্য তিনি অপরাজেয় কথাশিল্পী নামে খ্যাত।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘বিলাসী’ একটি মানবতামূলক ছোটগল্প। এই গল্পে সমাজের কুপ্রথা, কুসংস্কার ও বিধবা নারীদের প্রতি সামাজিক অবহেলার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গল্পটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে দিনাজপুর বন্ধুসভা। ১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় অনলাইন গুগল মিট অ্যাপে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

‘বিলাসী’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয়। সে সবার অনেক উপকার করলেও কেউ তা কখনোই স্বীকার করত না। মৃত্যুঞ্জয় ছিল একজন নির্ভেজাল মানুষ। মৃত্যুঞ্জয় কোনো রোগে আক্রান্ত হলে তাকে সেবা দিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনে গল্পের নায়িকা বিলাসী। একপর্যায়ে তাদের বিয়ে হয়। মৃত্যুঞ্জয় উঁচু জাতের ছেলে আর বিলাসী ক্ষুদ্র সাপুড়ের মেয়ে। সমাজে বর্ণপ্রথা এতই কড়া ছিল যে তারা মৃত্যুঞ্জয়-বিলাসীর বিয়েটা মানতে পারত না।

সে সময়ে সমাজে মেয়েদের ভিতু আর দুর্বল বলেই মনে করা হতো। একটি মেয়ে কোনো ছেলেকে সাহায্য করতে চাইলে সেটা সমাজের আত্মসম্মানে লাগে। অথচ একটা নিরপরাধ মেয়েকে দশজন পুরুষ মিলে মারলে তখন তা তাদের আত্মসম্মানে লাগত না, বরং তা যেন তাদের গৌরবকে আরও বাড়িয়ে দেয়। মৃতপ্রায় রোগীর পাশে একা থেকে তাকে সুস্থ করে তোলা বিলাসী যে কত বড় সাহসী এবং কত দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন, লেখক তা আমাদের বোঝাতে পেরেছেন।

বই পর্যালোচনায় সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চন্দ্র অধিকারী বলেন, ‘গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসী। মৃত্যুঞ্জয় উঁচু বংশের ছেলে এবং বিলাসী একজন সাপুড়ে মেয়ে। বিয়ের পর সমাজের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে নিঃসঙ্গ ও অবহেলিত জীবন যাপন করতে হতো তাদের। নিচু জাতের মেয়ে হওয়ায় বিলাসীর প্রতি সমাজের অবজ্ঞা, সন্দেহ ও নিষ্ঠুরতা এই গল্পে তুলে ধরা হয়েছে।’

পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন সভাপতি শবনম মুস্তারিন, সহসভাপতি দীপু রায়, সাংস্কৃতিক সম্পাদক জুঁই আফরোজ, দপ্তর সম্পাদক আল আবিক আবসার, প্রশিক্ষণ সম্পাদক বিরোশ চন্দ্র রায়, কার্যনির্বাহী সদস্য সুব্রত সরকারসহ অন্য বন্ধুরা।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা