সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস ও মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই ‘এত রক্ত কেন’
সমরেশ মজুমদারের ‘এত রক্ত কেন’ উপন্যাসটি এক দুঃসাহসিক সাংবাদিকের গল্প। এতে ২০০১ সালের পটভূমিতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উত্থান ও তাদের সন্ত্রাসবাদের কারণে সৃষ্ট রক্তপাতের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। লেখক এখানে শুধু সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্ত রাজনীতির বাস্তব চিত্রই আঁকেননি, পাশাপাশি তুলে ধরেছেন মানুষের টিকে থাকার সংগ্রাম ও ঐক্যের বার্তাও।
কাহিনির সূত্রপাত ঘটে আগরতলায় এবং পরে তা বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। ত্রিপুরা রাজ্যকে ভারত সরকারের থেকে স্বাধীন করতে কয়েকটি জঙ্গিগোষ্ঠী সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে বাঙালি ও ত্রিপুরাবাসীদের মধ্যে বিভেদ আরও জোরালো করে তোলে। উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে সাংবাদিক বাসুদেব। শ্যালক সৌমিত্রকে ‘টাইগার’ নামের জঙ্গিগোষ্ঠী অপহরণ করার পর ২৫ লাখ মুক্তিপণ দাবিতে যখন পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে ওঠে, তখন তিনি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন সৌমিত্রকে উদ্ধার করতে। সেখানে গিয়ে আবিষ্কার করেন, জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে দুই দেশেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তা, এমনকি বাংলাদেশের কয়েকজন দেশদ্রোহীও এতে যোগ দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মুক্তিযোদ্ধারা আবারও দৃঢ় অবস্থান নেন। দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন, যেন স্বাধীনতার অর্জন কলঙ্কিত না হয়। লেখক এভাবে দেখিয়েছেন—বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা যেমন দেশ বাঁচাতে একদিন জীবন বাজি রেখেছিলেন, তেমনি ভারতও নিজেদের সংকট মোকাবিলায় একদিন একই সাহস দেখাতে পারে।
১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট প্রথমা বিক্রয়কেন্দ্রে উপন্যাসটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করে সিলেট বন্ধুসভা। উপন্যাসের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন বন্ধু ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘“এত রক্ত কেন” সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস ও মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই।’
বন্ধু শতাব্দী দত্ত বলেন, ‘উপন্যাসের ভাষা ও গতি পাঠককে এমনভাবে টেনে নেয়, শেষ না করা পর্যন্ত থামা কঠিন।’ পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন, অনুপমা দাস, প্রীতম তালুকদার, কৃত্য ছত্রী, সুর্বণা দেব, ফারিহা হক ফিমাসহ অন্য বন্ধুরা।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা