তাপপ্রবাহে স্বস্তি ছড়াচ্ছেন বন্ধুরা

চট্টগ্রামের পটিয়া বন্ধুসভার উদ্যোগে তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সচেতনতায় লিফলেট, বিশুদ্ধ পানি ও খাওয়ার স্যালাইন বিতরণছবি: বন্ধুসভা

আবদুর রহমান (৬৫), গাজীপুরের জয়দেবপুরে রিকশা চালান। দেশব্যাপী চলমান তাপপ্রবাহেও থেমে নেই তাঁর রিকশা চালানো। এটাই যে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস। গাজীপুর বন্ধুসভার পক্ষ থেকে ঠান্ডা শরবত পেয়ে তিনি বলেন, ‘এই গরমে রিকশা চালাইতে অনেক কষ্ট হয় বাবা। তা–ও কাজ না কইরা কি আর পারি! বাইরে যা পানি পাওয়া যায়, তা–ও গরম। অহন ঠান্ডা শরবত খাইয়া আত্মাডা শান্তি পাইল।’

দুই সপ্তাহ ধরে দেশব্যাপী তাপপ্রবাহ চলছে। প্রায় প্রতিদিনই তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠা নামা করছে। অসহনীয় গরমে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। প্রখর রোদ আর অসহ্য গরমে সীমাহীন দুর্ভোগে জনজীবন বিপর্যস্ত। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কেউ মাথায় ছাতা ধরে পথ চলছেন, কেউ আবার প্রখর রোদের মধ্যে জীবিকার তাগিদে ছুটছেন। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরের বাইরে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। দাবদাহের কারণে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।

পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে ঠান্ডা পানি, স্যালাইন বিতরণ করে ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা

এই দাপপ্রবাহ থেকে একটু স্বস্তি দিতে পথচারী ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ঠান্ডা পানি, খাবার স্যালাইন, স্বাস্থ্যকর শরবত, বিস্কুট ও ক্যাপ বিতরণ করছেন প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা। পাশাপাশি হিটস্ট্রোক রোধে সচেতন করতে ও বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় বিভিন্ন বিষয় জনসাধারণের মধ্যে তুলে ধরতে সচেতনতামূলক লিফলেটও বিতরণ করা হচ্ছে।

গাজীপুর বন্ধুসভার উদ্যোগে ৫০ জনের মধ্যে ক্যাপ, স্যালাইন ও পানির বোতল বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি ১০০০ জনের বেশি পথচারী ও শ্রমজীবী মানুষকে ঠান্ডা স্বাস্থ্যকর শরবত পান করান এবং ৩০০ জনের মধ্যে স্যালাইন বিতরণ করেন বন্ধুরা। জয়দেবপুর রেলগেটে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘বন্ধুসভার উদ্যোগটি ব্যতিক্রম এবং প্রশংসনীয়। শত শত পথিকের জন্য প্রশান্তি এ রকম আয়োজন।’

রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় সাত ধাপে রোদছাতা, কোমল পানীয়, লেবুর শরবত, খাওয়ার স্যালাইন ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেছে মিরপুর বন্ধুসভা। আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আশপাশের এলাকায় পথচারী ও খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে কোমল পানীয় ও স্যালাইন বিতরণ করেছেন ড্যাফোডিল বন্ধুসভার বন্ধুরা।

পৌর শহরের চৌরাস্তা, পুরোনো বাসস্ট্যান্ড, আদালত চত্বর এলাকায় ১৯২ জন শ্রমজীবী ও পথচারীর মধ্যে পানি, স্যালাইন ও বিস্কুট বিতরণ করেন ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার বন্ধুরা। পানি পেয়ে ভ্যানচালক সাধন রায় (৪৯) বলেন, ‘এই গরমে মাল ওঠানো–নামানো খুবই কষ্টের। অল্পতেই হাঁপিয়ে যাই। সারা দিনই পানি খেতে হয়। পানি আর স্যালাইনের সঙ্গে কিছু খাবার পেয়ে উপকার হইল।’

তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সচেতনতায় হাবিপ্রবি বন্ধুসভার লিফলেট বিতরণ

উপজেলা শহরের ২৭৫ জন সাধারণ মানুষের মধ্যে মিনারেল ওয়াটার, খাওয়ার স্যালাইন ও লিফলেট বিতরণ করেছেন চট্টগ্রামের পটিয়া বন্ধুসভার বন্ধুরা। সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিলেন বাস ও টেম্পোচালক, রিকশাচালক, পথচারী, ফল বিক্রেতা, পেপার বিক্রেতা, পান, লেবু ও কলা বিক্রেতা, ঝালমুড়ি বিক্রেতা, ট্রাফিক পুলিশ, মুচিসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। বন্ধুরা প্রচণ্ড গরমে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কী কী করণীয়, সে সম্পর্কে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা সবাইকে সচেতন করতে ও বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় বিভিন্ন বিষয় জনসাধারণের মধ্যে তুলে ধরতে লিফলেট বিতরণ করেছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে মাথার ক্যাপ বিতরণ করেছেন বন্ধুরা। বন্ধুদের উপহার দেওয়া ক্যাপ পেয়ে আনারস বিক্রেতা জব্বার বলেন, ‘যে গরম পড়ছে, তাতে বাহারোত বিরায় মুশকিল। কাম না করলে হামরা খামো কী! তোরা হামাক টুপিটা দিলেন, তাতে কিছুটা স্বস্তি পাইছু।’

এ ছাড়া শহরের ভ্যানচালক, পথচারী, বয়স্ক মানুষ ও শিশুদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ করে সাতক্ষীরা বন্ধুসভা। টাঙ্গাইল বন্ধুসভাও একই মানবিক কাজ করেছে। নিজেদের হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে এই কাজ করছেন বন্ধুসভার বন্ধুরা। এরই মধ্যে সারা দেশের বিভিন্ন বন্ধুসভাও এ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।