পাঠচক্র মনের পরিধি বাড়ায়

পাঠের আসরে মনোযোগী বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

লেখালেখি করবেন, লেখক হবেন—এ সংকল্প ছেলেবেলায় তিনি আঁটেননি। এমনকি কল্পনাও করেননি একজীবন নিরলসভাবে লিখে কাঁটাবেন। বিজ্ঞানমনস্ক মস্তিষ্কে শুধু ভাবতেন, খুঁজতেন প্রতিটি ‘কেন’–এর উত্তর। এ কারণে বোধ হয় অঙ্কে বিএসসি অধ্যয়নরত অবস্থায় বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্পটি লিখতে পেরেছিলেন।

নিশ্চয়ই ভাবছেন, বাজি ধরে আবার শ্রেষ্ঠ গল্প লেখা যায় নাকি। কীভাবে যায়, আত্মজৈবনিক লেখায় নিজেই মানুষটি লিখেছেন, ‘বারো, তেরো বছর বয়সের মধ্যে বিষবৃক্ষ, গোরা, চরিত্রহীন পড়া হয়ে গিয়েছে। আর সে কি পড়া!... বড় ঈর্ষা হতো বই যাঁরা লেখেন তাঁদের ওপর। হয়তো সেই ঈর্ষার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল একদিন লেখক হবার চেষ্টা করার সাধ।’

থাক, আর কথা না বাড়াই। বাজি ধরে গল্প লেখার কাহিনি সংক্ষেপটুকু বরং বলি। বন্ধুদের আড্ডায় কথায় কথায় লেখা ছাপার বিষয় উঠে এল। সূত্রপাত এক বন্ধুর তিনটি লেখা মাসিকপত্রের অফিস থেকে ফিরে আসা। বন্ধু সম্পাদককে একটা গাল দিল। মানুষটি প্রতিবাদ করলেন। বললেন, ‘কেন বাজে কথা বকছ? ভালো লেখা কি এত সস্তা যে হাতে পেয়েও সম্পাদকেরা ফিরিয়ে দেবেন?’ প্রশ্নের তির তেড়ে এল মানুষটির কাছে। বন্ধুদের একজন প্রশ্ন করেই বসল, ‘তুমি কী করে জানলে?’ ‘আমি জানি।’ উত্তরে মানুষটি বললেন। নানা কথা–কাটাকাটির প্রসঙ্গক্রমে মানুষটি বাজি ধরে বললেন, ‘তিন মাসের মধ্যে ভারতবর্ষ, প্রবাসী বা বিচিত্রায় গল্প লিখে ছাপাবেন।’ যে কথা সে কাজ ‘বিচিত্রায়’ ছাপা হলো তাঁর প্রথম গল্প। শুধু কি ছাপা হলো, সম্পাদক বাড়ি পর্যন্ত এসেছিলেন। হাতে তুলে দিয়েছিলেন সম্মানী। দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আর একটি গল্প চাই।’

বলছিলাম মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প লেখার গল্পের কথা। বাজি ধরে লেখা গল্পের নাম বলব। তার আগে একটি তথ্য জানিয়ে রাখি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সার্টিফিকেট নাম কিন্তু মানিক নয়। মানিক হচ্ছে তাঁর ডাকনাম। বাড়ির লোকেরা তাঁকে আদর করে এই নামে ডাকতেন। তাঁর আসল নাম প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। আর গল্পটির নাম ‘অতসী মামি’।

সেই যে শব্দ নিয়ে খেলা শুরু করলেন, তারপর একাধারে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখে গেছেন কালজয়ী সব লেখা। সারা জীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা বইয়ের পাতায় কলমের আঁচড়ে অক্ষরে অক্ষরে গেঁথে রেখে গেছেন। সৃষ্টি করেছেন বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সব চরিত্র। তাঁকে বিশ্লেষণ করা সহজ নয়। গত ১ জানুয়ারি যশোরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নিকটে অবস্থিত উন্মুক্ত মঞ্চে যশোর বন্ধুসভার ২০২৩ বছরের প্রথম পাঠচক্রে এসব কথা উঠে আসে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প থেকে নির্বাচিত ‘প্রাগৈতিহাসিক’ শিরোনামের গল্পের ওপর এদিন প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন দাউদ পাবলিক কলেজের সহকারী অধ্যাপক কামরুজ্জামান আজাদ। তিনি মানিকের জীবন, লেখার বিষয় নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন। ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও যশোর বন্ধুসভার উপদেষ্টা জে এম ইকবাল হোসেন আলোচনার একপর্যায়ে বন্ধুসভার পাঠচক্র আয়োজনের প্রশংসা করেন। প্রথম আলোর যশোর জেলা প্রতিনিধি ও বন্ধুসভার উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন রচনা, বিষয় ভিন্নতা ও পাঠকের জন্য থাকা বার্তা বিষয়ে আলোকপাত করেন। যশোর বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন নিয়মিত পাঠচক্র থেকে অর্জিত জ্ঞান বন্ধুদের সমৃদ্ধ করবে, পাঠচক্র মনের পরিধি বাড়ায় বলে অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে আলোচনার পাশাপাশি কবি মামুন আজাদ স্বরচিত একটি রুবাই পাঠ করে শোনান। বন্ধুদের মধ্য থেকে পাঠ প্রতিক্রিয়ায় অংশ নেন যশোর বন্ধুসভার মুরাদ হোসেন, সুমাইয়া আক্তার, কামরুজ্জামান সাদ, খন্দকার রুবাইয়াসহ অন্য বন্ধুরা। লাকি রানী কাপুড়িয়ার সভাপতিত্বে পাঠচক্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বন্ধু সুমন রেজা।

সাধারণ সম্পাদক, যশোর বন্ধুসভা