দেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে আছে প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরোনো মহারাজার দিঘি। শীতকালে এই দিঘির পাড়ের সবুজ গাছগাছালিতে অতিথি পাখির কলকাকলি তৈরি করে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এসব পাখির নিরাপদ আশ্রয়, পাখি রক্ষা ও তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য দিঘির পাড়ের গাছে গাছে বেঁধে দেওয়া হয়েছে মাটির হাঁড়ি।
প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় অর্ধশত গাছে মাটির হাড়ি বেঁধে দিয়েছে পঞ্চগড় বন্ধুসভা। ‘একটি ভালো কাজ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৭ অক্টোবর এ কার্যক্রম করেন বন্ধুরা।
পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নে ভারত সীমান্তঘেঁষা ভিতরগড় এলাকায় প্রায় ৫৪ একর জায়গাজুড়ে এই মহারাজার দিঘির অবস্থান। সমতলের সবুজ চা-বাগানবেষ্টিত, ভারত সীমান্তঘেঁষা, কোলাহলমুক্ত, গাছগাছালির নিবিড় ছায়ায় ঘেরা মহারাজার দিঘি পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। বিশেষ করে প্রতিবছর শীতের মৌসুমে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আসা পর্যটকদের বেশির ভাগই মহারাজার দৃষ্টিনন্দন দিঘিও ঘুরে যান। দিঘির পাড়ে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিস্তীর্ণ জলরাশির ঢেউ আর নানা পাখির কূজনে মোহিত হন তাঁরা। দিঘির পাড়ের গাছে থাকা পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যই পঞ্চগড় বন্ধুসভার এ উদ্যোগ।
গাছে মাটির হাঁড়ি বাঁধার পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে পাখি শিকার নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধসহ বিভিন্ন লেখাসংবলিত ফেস্টুন টানিয়ে দেওয়া হয়।
ঝড়, বৃষ্টি, রোদ থেকে পাখিদের রক্ষা করতে হাঁড়িগুলোর নিচের দিকে ছোট ছোট ছিদ্র করে দেওয়া হয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি ঢুকলেও নিচের ছিদ্রগুলো দিয়ে পড়ে যাবে। এ ছাড়া হাঁড়ির দুই দিকে বড় দুটি মুখ রাখা হয়েছে। এক দিক দিয়ে পাখি ঢুকলে আবার অন্য মুখ দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে।
পঞ্চগড় বন্ধুসভার সভাপতি আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মহারাজার দিঘির পাড়ে এলেই হাজারো পাখির কলকাকলি শোনা যায়। এসব পাখির নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যই আমাদের এই ছোট্ট উদ্যোগ। আশা করি, এতে প্রকৃতিকে সৌন্দর্য বিলানো পাখিগুলো নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।’
কর্মসূচিতে প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি রাজিউর রহমান, পঞ্চগড় বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামানসহ বন্ধুসভার অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।