মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকের উপজীব্য লাশ গুমের ঘৃণ্য রাজনীতি

এমসি কলেজ বন্ধুসভার পাঠচক্র
ছবি: বন্ধুসভা

১৯৫৩ সালের জানুয়ারি মাস, ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় থাকার অপরাধে রাজবন্দী হিসেবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারে বন্দী ছিলেন মুনীর চৌধুরী। বন্দিজীবনে করার তেমন কিছুই ছিল না, অলস সময়ের বেড়াজাল যেন তাঁকে ঘিরে ধরছিল। এমনই এক সময়ে ১৭ জানুয়ারি তাঁর কাছে একটি চিঠি এল, প্রেরক ছিলেন আরেক রাজবন্দী রণেশ দাশগুপ্ত। অসাধারণ এক প্রস্তাব ছিল সেই চিঠিতে, প্রথম শহীদ দিবস পালন উপলক্ষে মুনীর চৌধুরীকে একটি নাটক লেখার অনুরোধ করেছিলেন তিনি।

ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ দিবস পালন উপলক্ষেই নাটকটি জেলখানায় প্রথম মঞ্চস্থ হয়। জর্জ বার্নাড’শর ব্যঙ্গাত্মক জীবন-জিজ্ঞাসা মুনীর চৌধুরীকে বরাবরই প্রভাবিত করেছে, ‘কবর’ নাটকটিও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ভাষা আন্দোলনে বহু মানুষ শহীদ হলেও অল্প কজনের পরিচয় আমরা জানতে পেরেছিলাম; কত শত লাশ গুম করা হয়েছিল, তার প্রকৃত হিসাব আজও জানা যায়নি। লাশ গুমের এই ঘৃণ্য রাজনীতিকে উপজীব্য করেই নাটকটির পুরো গল্প এগিয়ে গেছে।

নাটকটির সমগ্র ঘটনাস্থল ছিল গোরস্তান। ভাষাশহীদদের লাশ গুম করার নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য একজন অসৎ নেতা তাঁর দলবল নিয়ে সেখানে এসেছিলেন। নেতার এই নীলনকশা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য ছিলেন ইন্সপেক্টর হাফিজ। নাটকের শুরু থেকেই অসৎ নেতাকে মদ্যপানে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়, সুযোগ পেয়ে লোভী হাফিজও নেতার সঙ্গে যোগ দেয়। বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শেষ চিহ্নটুকু ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা করতে থাকেন তাঁরা।

সবকিছু যখন পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছিল, তখনই মুর্দা ফকির নামক এক চরিত্রের আগমন ঘটে। আধপাগল এই মানুষটি যেন সমাজের বিবেক হিসেবে আবির্ভূত হন। লাশগুলো এখনো জীবিত আর তাদের কবর থেকে উঠিয়ে তিনি মিছিল করবেন—এমন অদ্ভুত একটি কথা বলে তাদের ভড়কে দেন মুর্দা ফকির। এরপর কিছু অস্বাভাবিক ঘটনার আবর্তনে এগিয়ে গেছে সম্পূর্ণ গল্প।

পাঠচক্র শেষে এমসি কলেজ বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

‘কবর’ নাটকটি বই আকারে ১৯৬৬ সালে আহমেদ পাবলিশিং হাউস কর্তৃক প্রকাশিত হয়। বইটি নিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি পাঠচক্র আয়োজন করে এমসি কলেজ বন্ধুসভা। কলেজসংলগ্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে বান্দরটিলায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্চালনা করেন পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক সামিয়া আক্তার।

এই বই নিয়ে চলচ্চিত্র আকারে নাটকও প্রকাশিত হয়। পাঠচক্রে উপস্থিত বন্ধুরা বই পড়ে এবং চলচ্চিত্র আকারে নাটক দেখে নিজ নিজ অনুভূতি প্রকাশ করেন। দপ্তর সম্পাদক শারমিন লিপি বলেন, একটি নাটক সার্থক করার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান থাকে বিভিন্ন চরিত্রের। চরিত্রগুলো যত শক্তিশালী হবে, নাটকের বনিয়াদ তত মজবুত হবে। ‘কবর’ নাটকটিও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তিনটি কেন্দ্রীয় চরিত্র পুরোটা সময় দারুণভাবে নাটকটির গল্প টেনে নিয়ে গেছে।

পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি সুমন মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ, বর্তমান সভাপতি মেহেদী হাসান, সহসভাপতি রুবেল ফারহিন, সাধারণ সম্পাদক লিমা তালুকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমদ হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক উদয় সরকার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব আহমদ, প্রচার সম্পাদক তাপস শীল, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইউসুফ মাহদী, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক তারিকুল ইসলাম, বন্ধু জীবন বিশ্বাস, সামিহা তাহসিনসহ অন্য বন্ধুরা।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, এমসি কলেজ বন্ধুসভা