বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল জাদুঘর পরিদর্শন

ময়মনসিংহ বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, অধিকার আদায়ে আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তাঁর কর্মজীবনের নানা দিক পৌঁছে দিতে রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’। গত ৯ অক্টোবর ময়মনসিংহ জংশনে অবস্থান করেছিল এটি। সেখানে জাদুঘরটি পরিদর্শন করেন ময়মনসিংহ বন্ধুসভার বন্ধুরা।

একটি ব্রডগেজ ও একটি মিটারগেজ কোচ নিয়ে তৈরি এই ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর। জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। কোচের এক পাশের দেয়ালের ছয়টি ভাগে রাখা হয়েছে ‘কিংবদন্তির প্রথম প্রহর’, ‘ধ্রুবতারার প্রথম কিরণ’, ‘নক্ষত্র হওয়ার পথে’, ‘বাংলার মাটি ও ভাষার বঙ্গবন্ধু’, ‘ধূমকেতু থেকে নক্ষত্র’, ‘মুক্তির স্বপ্নের সূচনা’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত। এখানে তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর ছাত্রজীবন, বৈবাহিক জীবন, রাজনীতিতে হাতেখড়ি, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করার মাধ্যমে গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে ওঠার ইতিহাস।

দেয়ালের আরেক পাশে ছয় ভাগে রয়েছে ‘দুর্বার পথচলা’, ‘নিপীড়িতদের কান্ডারি’, ‘এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন’, ‘মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতার কথা’, ‘স্বপ্ন গড়ার দিনগুলো’, ‘যে আলো নেভেনি আজও’ শিরোনামে শিল্প প্রদর্শনী। এতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছেষট্টির ঐতিহাসিক ছয় দফা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের প্রধান নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান দর্শকদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধুর লেখা বই
ছবি: বন্ধুসভা

শীতাতপনিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে আরও রাখা হয়েছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের অক্ষরের আদলে তৈরি করা দৃষ্টিনন্দন একটি বুকশেলফ। বইগুলোর মধ্যে শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর রচিত বিভিন্ন শিশুতোষ বই। ‘যাদু মনি’ সম্বোধন করে মেয়ে হাসুকে নিয়ে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিসহ মোট ছয়টি চিঠি রাখা হয়েছে। সেখানে আরও শোভা পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’সহ তাঁর কর্মময় জীবনের ওপর রচিত গুরুত্বপূর্ণ বই। শোভা পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বই ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’।

জাদুঘরে স্থান পেয়েছে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ি, সমাধিসৌধ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত প্রতীকী চশমা, মুজিব কোট, পাইপ, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, জাতীয় শহীদ মিনার, ‘কারাগারের রোজনামচা’, বিজয়স্তম্ভ কমলাপুর ও মুজিব শতবর্ষের লোগো। আরও রয়েছে একটি ডিসপ্লে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা সময়ের ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। এর পেছনে বেজে চলে ‘তুমি ইতিহাসজুড়ে সর্বশ্রেষ্ঠ মহানায়ক, এই বাংলার তুমি শোষকের যম শোষিতের দম স্রষ্টা স্বাধীনতার’। রেলওয়ে কর্মকর্তা মঞ্জুর উল আলম চৌধুরীর লেখা গানটি জাদুঘরে থিম সং হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আর কোচ দুটির বাইরের অংশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধারাবাহিক সংগ্রামের ম্যুরাল চিত্র স্থান পেয়েছে।

কোচের এক কোনায় রাখা পরিদর্শন বইয়ে বন্ধুরা নিজেদের মন্তব্য লেখেন। পরিদর্শন শেষে বন্ধুরা তাঁদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক বন্ধুর বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের নির্ভুল ইতিহাস জানতে হবে।’
সভাপতি আবুল বাশার বলেন, ‘জাদুঘর ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি–সম্পর্কিত জ্ঞানের সঙ্গে মানুষকে সম্পৃক্ত করে। আমাদের চেতনাকে জাগ্রত করতে জাদুঘরে বারবার আসা উচিত।’

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা