নিজেকে সমৃদ্ধ করতে বিতর্কের বিকল্প নেই

রাজবাড়ী আঞ্চলিক পর্বের বিতর্ক উৎসবে বিজয়ীদের সঙ্গে আমন্ত্রিত অতিথি ও বিচারকেরা
ছবি: বন্ধুসভা

১৯ সেপ্টেম্বর, সকাল সাড়ে সাতটা। রাজবাড়ীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে বৃষ্টি উপেক্ষা করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জড়ো হতে থাকে কিশোর-তরুণ ও শিক্ষার্থীরা। তাদের কারও কারও সঙ্গে শিক্ষক ও অভিভাবক। সবাই এসেছে ‘যোগ দাও যুক্তির মেলায়’ স্লোগানে পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসবে। নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্নের পর শুরু হয় উৎসবের মূল পর্ব।

উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আজিজা খানম। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর প্রতিনিধি এজাজ আহম্মেদ। মাদকের কুফল ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেন রাজবাড়ীর বন্ধুসভার উপদেষ্টা চিকিৎসক পূর্ণিমা দত্ত। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান ও সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক সপ্তদীপা পাল।

উদ্বোধনী পর্বে আজিজা খানম বলেন, ‘বিতর্ক মানুষের চেতনাকে শাণিত করে। যুক্তির মাধ্যমে যেকোনো বিষয়ের সমাধান করা যায়। বিতর্ক শিশুদের সৃজনশীলতা বিকশিত করে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। এসব প্রশ্ন সমাধানে শিশুরা অপরের সঙ্গে আলোচনা করে। সব মিলিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে বিতর্কের বিকল্প নেই। বিতর্কচর্চা আরও প্রসারিত করতে হবে। বিতর্কচর্চাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। এতে সমাজ একটি যুক্তিনির্ভর সৃজনশীল জাতি পাবে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে চিকিৎসক পূর্ণিমা দত্ত বলেন, ‘বর্তমানে শিশু-কিশোরেরা মুঠোফোননির্ভর হয়ে পড়ছে। মুঠোফোন তাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অনুষঙ্গ হয়ে আছে। মুঠোফোনে আসক্ত হওয়া চলবে না। এতে মানসিক সমস্যা তৈরি হয়।’ এ ছাড়া তিনি শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে দূরে থাকতে বলেন।

বিতর্ক উৎসবের বিভিন্ন পর্বে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আহসান হাবীব, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সেলিম রেজা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক কে এম আজাদুর রহমান, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা পার্থপ্রতীম দাস, রাজবাড়ী বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অমিতা চক্রবর্তী, কবি নেহাল আহমেদ, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন, আফড়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বার, রাজবাড়ী ডিবেট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক উদ্দিন ও সাদমান সাকিব।

বিতর্ক প্রতিযোগিতা
ছবি: বন্ধুসভা

সমাপনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আরিফুর রহমান। এ সময় রাজবাড়ী বন্ধুসভার সহসভাপতি আশিফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ ফয়সাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদা খাতুন, মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মহসিন মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক কেয়া প্রামাণিক, দপ্তর সম্পাদক হৃদয় খান, দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক রাহিম মোল্লা, বন্ধু আবদুল হালিম, বিনয় হালদার, হালিমা তারিফ, নাঈম ব্যাপারী, সুমন মণ্ডল, আল আমিন, আশরাফুল ইসলাম, রাইসুল ইসলাম, দিব্য নাগ, রাইয়ান শেখ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সমাপনী পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হোসনে আরা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশে অনেক আইন রয়েছে। যেমন ডিমওয়ালা ও জাটকা ধরা, পরিবহন করা, বিক্রি করা নিষেধ। কিন্তু আমরা এলিট ব্যক্তিরা এসব মাছ কিনে খাচ্ছি। গাড়ির কালো ধোঁয়া নিয়ে শক্তিশালী আইন রয়েছে। কিন্তু এটার প্রয়োগ নেই। আমরা কেউ এই আইন মানছি না। করোনার সময় আমরা সারা পথ মাস্ক খুলে চলাফেরা করেছি। কিন্তু অফিসে ঢোকার আগে মুখে মাস্ক দিয়েছি। আমাদের নিজের সচেতন হতে হবে। নিজে সচেতন হয়ে অন্যকে সচেতন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সনাতনী বিতর্ক, বারোয়ারি বিতর্ক, নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ‘পরিবেশ রক্ষায় ব্যক্তির ভূমিকাই প্রধান’ বিষয়ের ওপর বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, রানার্সআপ হয় রাজধরপুর উচ্চবিদ্যালয়। বারোয়ারি বিতর্কে সেরাদের সেরা হয় রাজধরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত ইসলাম। মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে কুইজ প্রতিযোগিতায় গোয়ালন্দ শহীদ স্মৃতি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানা প্রথম, রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুরে জান্নাত দ্বিতীয় ও তৌহিদা হেলেন তৃতীয় স্থান অর্জন করে। নিম্নমাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে কুইজ প্রতিযোগিতায় বহরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিবুর জাহান প্রথম, একই প্রতিষ্ঠানের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রলয় মোদক দ্বিতীয় ও ইয়াছিন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রাজু তৃতীয় স্থান অর্জন করে।

সাধারণ সম্পাদক, রাজবাড়ী বন্ধুসভা