গ্রন্থাগারে আসুন, সৃজনশীল বই পড়ুন

‘গ্রন্থাগারে আসুন, সৃজনশীল বই পড়ুন’ শিরোনামে যশোর বন্ধুসভার সেমিনার
ছবি: বন্ধুসভা

বই পড়ার মাধ্যমে আলোকিত মানুষ গড়ে ওঠে। আলোকিত মানুষেরাই সভ্যতা, সত্য ও সুন্দর সৃষ্টি করে। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম মুদ্রিত ও সৃজনশীল বই পাঠ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। তাঁরা কেবল একাডেমিক ও চাকরির জন্য পড়াশোনায় ব্যস্ত। ফলে সৃজনশীল বই তাঁদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে অপ্রয়োজনীয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রায় সব পাবলিক লাইব্রেরিতে এমন চিত্রই দেখা যায়।

অথচ পাবলিক লাইব্রেরির চিত্র কখনোই এমন হওয়ার কথা নয়। এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে যশোর বন্ধুসভা। ২৮ অক্টোবর বিকেলে যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির পাঠকক্ষে পাঠকদের গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত সৃজনশীল বই পাঠে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে ‘গ্রন্থাগারে আসুন, সৃজনশীল বই পড়ুন’ শিরোনামে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। প্রথম আলোর রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ‘একটি করে ভালো কাজ’-এর অংশ হিসেবে যশোর বন্ধুসভার এ কর্মসূচি।

সেমিনারে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বন্ধুসভার বন্ধু, উপদেষ্টাসহ অন্তত ৩০ জন অংশ নেন। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম। তিনি শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগারের সৃজনশীল বই পাঠে উদ্বুদ্ধ করেন এবং নিয়মিত এসব বই পাঠের আহ্বান জানান।

এরপর উপস্থিত সবাইকে দেওয়া হয় প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর বহুল পঠিত ‘বই পড়া’ প্রবন্ধ। এটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করেন সবাই। পাঠ প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা তুলে ধরেন তাঁদের পাঠ অভিব্যক্তি। আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন বন্ধু মনিরা খাতুন ও মোস্তাফিজুর রহমান।

আলোচকদের বক্তব্যে উঠে আসে বর্তমান সময়ে পাঠকদের বই বিমুখতার নেপথ্যের কারণ এবং এর ভয়াবহ ফলাফলের কথা। তাঁরা শিক্ষার্থীদের আত্মার খোরাক মেটানোর জন্য চাকরির বইয়ের পাশাপাশি গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত বিভিন্ন দুর্লভ ও সৃজনশীল বই পাঠের আহ্বান জানান।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে সামাজিক ও নৈতিকতার অবক্ষয় এবং বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বই বিমুখতা ও মুঠোফোন আসক্তি। গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত বইয়ের পাঠক কমে যাচ্ছে; যেটা আশঙ্কাজনক এবং এর ফলাফল ভয়াবহ হতে চলেছে। অবস্থা এমন যে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো বাতি জ্বালিয়ে গ্রন্থাগারের খোঁজ নিতে হবে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সৃজনশীল বই পড়ার বিকল্প নেই।

‘গ্রন্থাগারে আসুন, সৃজনশীল বই পড়ুন’ শিরোনামে যশোর বন্ধুসভার সেমিনার
ছবি: বন্ধুসভা

যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির লাইব্রেরি সম্পাদক এস নিয়াজ মোহাম্মদ সবাইকে লাইব্রেরিতে এসে সৃজনশীল বই পাঠের আহ্বান জানান। আলোচনা করেন সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, চাকরির বইয়ের পাশাপাশি গ্রন্থাগারের সৃজনশীল বই পাঠ করলে চাকরির প্রস্তুতি আরও মসৃণ ও সহজ হবে। পাশাপাশি ভেতরে প্রেরণার সৃষ্টি হবে, যেটা চাকরি পেতে সাহায্য করবে। একই কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সপ্তাহে একটি বই পড়ি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শাহজাহান কবীর তাঁর বক্তব্যে বলেন, সৃজনশীল বই পাঠের মাধ্যমে মানবিক ও সুস্থ ব্যক্তিমানস তৈরি হয়, যা মনকে প্রফুল্ল রাখে এবং ব্যক্তিজীবনে সফলতার পথ বাতলে দেয়। গ্রন্থাগারে অপঠিত ধুলা জমা দুর্লভ বইগুলোর আর্তনাদে সাড়া দিয়ে নিজের উন্নয়নে এসব সৃজনশীল বই পড়া জরুরি।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কবি মামুন আজাদ, যশোর বন্ধুসভার উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন, শাহেদ চৌধুরী, সভাপতি লাকি রানী কাপুড়িয়া, বন্ধুসভার বন্ধু সাইদুজ্জামান লিটন, জাহানারা জ্যোতি, নুরুন্নবী হৃদয়, হামিম, রুবাইয়া, হিমু প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সুমন রেজা।

সাংগঠনিক সম্পাদক, যশোর বন্ধুসভা