মরিয়মের এক গোলাপ হাসি

নারী হকার মরিয়ম বেগমকে দিনাজপুর বন্ধুসভার উপহার
ছবি: বন্ধুসভা

দিনাজপুর জেলার পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গা নদীর তীরঘেঁষা বাঁধের পারে ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকেন মরিয়ম বেগম (৪৫)। রাত পেরিয়ে সকাল হলেই শুরু হয় নিজের পায়ের সঙ্গে যুদ্ধ। সকাল সকাল অসংখ্য পত্রিকা নিয়ে হেঁটে মানুষের হাতে পৌঁছে দেন দেশ-বিদেশের খবর। দিনাজপুরের একমাত্র নারী হকার তিনি। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই কাজ করছেন।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে দিনাজপুর বন্ধুসভার একদল বন্ধু পৌঁছে যান মরিয়ম বেগমের বাড়িতে। নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁর সঙ্গে গল্প করেন। নিজের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে হার না–মানা এই নারী জানান, ছোটবেলায় দূরদূরান্তে বকুল ফুল কুড়িয়ে মালা বানিয়ে বিক্রি করেছেন রাস্তায় রাস্তায়। ভাঙা প্লাস্টিক ও বোতল কুড়িয়েছেন বহুদিন। রাজমিস্ত্রির কাজেও যুক্ত ছিলেন। জীবনে বহু কষ্ট করেছেন, বিয়ের পর কষ্ট করে তিন সন্তান বড় করেছেন। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ঘরটি তৈরি করেন। সেই ঋণ এখনো পরিশোধ করে যাচ্ছেন।

মরিয়ম বেগমের বাড়ির ছোট্ট খোলা আঙিনায় বসে এই গল্প শোনেন বন্ধুরা। তবে বয়স হওয়ায় আগের মতো আর কষ্ট করতে পারেন না তিনি। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে পত্রিকা বিক্রিও কমে গেছে। বলেন, ‘আগের মতো আর খাটিবার পারি না, সারা দিন হাঁটার জন্য পায়ে খুব ব্যথা হয়। মোবাইল পেপারের জন্য বেচাকেনাও কম। আর বেশি দিন বোধ হয় পারব না। ছাড়তে চাচ্ছি কাজটা।’

গল্প শেষে দিনাজপুর বন্ধুসভার সভাপতি মুনিরা শাহনাজ চৌধুরী নারী দিবসের শুভেচ্ছাস্বরূপ গোলাপ ফুল, খাবার ও একটি শাড়ি উপহার দেন। উপহার পেয়ে খুশি হয়ে মরিয়ম বেগম বলেন, ‘এমন করি কেউ কুনো দিন আমাকে শুভেচ্ছা দ্যায় নাই। খুব খুশি হইলাম।’ তাঁর চোখেমুখে ভেসে উঠে খুশির প্রতিচ্ছবি।

সাধারণ সম্পাদক, দিনাজপুর বন্ধুসভা