কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের ‘মা’ উপন্যাস নিয়ে পাঠের আসর করে খুলনা বন্ধুসভা। ৩০ আগস্ট বিকেলে প্রথম আলো খুলনা অফিসে এটি অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্চালনা করেন কার্যনির্বাহী সদস্য এম এম মাসুম বিল্লাহ।
উপস্থিত ছিলেন খুলনা বন্ধুসভার উপদেষ্টা অমিত সরদার। তিনি বলেন, ‘একটি ভালো বই ভালো মানুষ হতে সাহায্য করে। কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের “মা” উপন্যাসটি পড়লে জানা যাবে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস।’
সভাপতি তুহিন রায় বলেন, ‘বই পড়ার বিকল্প নেই। কোনো জাতিকে জানতে হলে, ইতিহাস জানতে হলে অবশ্যই বই পড়তে হবে।’
পাঠচক্রে বন্ধুদের আলোচনায় উঠে আসে, “মা” উপন্যাসের মূল কাহিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। উপন্যাসের প্রথমে আজাদের মায়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শুরু। খুবই ধনী ছিলেন আজাদের বাবা ইউনুস সাহেব। আজাদের মা সাফিয়ার জন্য এত ধনী—এ কথা অকপটে স্বীকার করেন তাঁর বাবা। ইউনুসের দ্বিতীয় বিবাহের পরে সাফিয়ার একমাত্র সন্তান আজাদকে নিয়ে স্বামীর থেকে দূরে সরে গিয়ে শুরু হয় সাদামাটা এবং কষ্টের জীবন। ছেলেকে ভালোভাবে মানুষ করার জন্য করাচিতে পাঠান। সেখানে গিয়ে আজাদ বুঝতে পারে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য।
যখন স্বাধীনতার ডাক আসে, আজাদও সেই ডাকে সাড়া দেয়। একপর্যায়ে রাজাকারদের সহযোগিতায় ধরা পড়ে আজাদ। তার ওপর চলে অমানবিক অত্যাচার। প্রথমে কষ্ট বা ব্যথা অনুভূত হলেও পরে আর কষ্ট টের পায় না সে। এ যেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা ‘রেইন কোট’–এর প্রতিচ্ছবি। শহীদ রুমীর সঙ্গেও ছিল আজাদের খুব ভালো সম্পর্ক। তার বাবা পরে মা সাফিয়াকে বারবারই নিজের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ফিরে যাননি।
সাফিয়া স্বাধীনতার পরে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আর ভাত খাননি। মেঝের ওপর ঘুমিয়ে থাকতেন। কারণ, ছেলে আজাদ ভাত খেতে চেয়েও খেতে পারেনি, রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি। রাতে শীত করলে গায়ে শাড়ি ভাঁজ করে গায়ে দিতেন। আজাদ আসবে বলে ভাত রাঁধতে যান সাফিয়া, অথচ ছেলে যে নেই—এ কথা মা বিশ্বাস করতে রাজি নন।
উপন্যাসটিতে আনিসুল হক শব্দভান্ডার ব্যবহারে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। যখন শহীদজননী সাফিয়াকে সমাধিস্থ করার পরে বৃষ্টি নেমে আসে রোদের মধ্যে, তখন তিনি সেই বৃষ্টিকে মনে করেছেন আজাদ, রুমিসহ মুক্তিযোদ্ধারা দাফনকার্যে অংশগ্রহণ করছেন। রোদের মধ্যে বৃষ্টি পড়ার জন্য ঔপন্যাসিক বাংলার জনপ্রিয় ছড়া, ‘রোদ হচ্ছে, বৃষ্টি হচ্ছে খেঁকশিয়ালের বিয়ে হচ্ছে’ ছড়াটি উল্লেখ করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশের কথাও আনিসুল হক তুলে ধরেছেন। আজাদ জর্জ হ্যারিসনের, ‘মাই ফ্রেন্ড কেম টু মি, স্যাডনেস ইন হিজ আইজ...ব্যাংলা দেশ’ গানটি হাতে লিখেছিলেন। বিখ্যাত গান, ‘ডাকে পাখি, খোলো আঁখি, দেখো সোনালি আকাশ’ গানটিও উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন কবিতার উদাহরণ এনেছেন এই উপন্যাসে, উল্লেখ করেছেন রূপক, উপমা, বক্রোক্তিসহ নানা অলংকার।
সবশেষে পাঠচক্র নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা হয়। বিজয়ী হয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রহমাতুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক ইমন মিয়া, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দপ্তর সম্পাদক ফারজানা যুঁথি, ছোট্ট বন্ধু শ্রেয়াণ, আখতারুজ্জামানসহ অন্য বন্ধুরা।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, খুলনা বন্ধুসভা