মঞ্চস্থ হলো ভৈরব বন্ধুসভার মঞ্চনাটক ‘লালন’

ভৈরব একুশে বইমেলার মঞ্চে বাউলগানের অগ্রদূত লালনের জীবনকর্মের ওপর লেখা নাটক ‘লালন’ পরিবেশন করেন ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরাছবি: আনাস খান
অসাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে লালনের রচিত গানগুলো যুগ যুগ ধরে প্রভাবিত করে আসছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে।

মঞ্চনাটক আমাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অতীতে মঞ্চনাটকই ছিল বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। ইতিহাস বলে, সমাজে প্রগতিশীল মানুষেরাই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত। বর্তমান ওটিটির যুগে এসেও মঞ্চনাটকের চাহিদা কোনো অংশে কম নয়।

২১ ফেব্রুয়ারি ভৈরব একুশে বইমেলার মঞ্চে বাউলগানের অগ্রদূত লালনের জীবনকর্মের ওপর লেখা নাটক ‘লালন’ পরিবেশন করেন ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা। নির্দেশনায় উপদেশক ছিলেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা ও নির্দেশনা দেন সুমাইয়া হামিদ।

নাটকটিতে ওঠে আসে লালনের জীবনের নানা ঘটনা। মানবতাবাদী দর্শনের লালন শৈশব থেকে জগৎকে দেখতেন আলাদাভাবে। জ্ঞানপিপাসু মন ঘরে বন্দী থাকতে চায় না। সে দেখতে চায় জগৎ-সংসারের নানা ঘটনা। বৈবাহিক জীবনও তাঁকে সংসারী করতে পারে না। তখন দুরারোগ্য বসন্তে আক্রান্ত হলে কালীগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় লালনকে উদ্ধার করেন মলম শাহ। মলম শাহ ও তাঁর স্ত্রী মতিজান বাড়িতে নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। আধ্যাত্মিক গুরু সিরাজ সাঁইয়ের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। মুসলমানের ঘরে সুস্থ হয়ে যখন তিনি গ্রামের বাড়ি ফিরে যান, তখন পরিবার তাঁকে গ্রহণ করেনি, জাত যাবে বলে গ্রামে ত্যাগের নির্দেশ যখন দেওয়া হয়, তখন লালন গেয়ে ওঠেন,
‘জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা।
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না।।
আসবার কালে কি জাত ছিলে
এসে তুমি কি জাত নিলে।
কি জাত হবা যাবার কালে
সেই কথা ভেবে বলো না।’

এভাবেই এগিয়ে যায় সুফিসাধক, দার্শনিক ‘লালন’ নাটক। অসাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে লালনের রচিত গানগুলো যুগ যুগ ধরে প্রভাবিত করে আসছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে।

ভৈরব বন্ধুসভার মঞ্চনাটক ‘লালন’- এর একটি দৃশ্য
ছবি: আনাস খান

‘কেউ কি আমারে বুঝবে?’ প্রশ্নটি দিয়ে নাটকের সমাপ্তি ঘটে। লালন চরিত্রে অভিনয় করেন ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা জনি আলম। অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন বন্ধু মাসুদুর রহমান, মোশারফ রাব্বি, ফ্রমি হক, সেলিম রেজা, প্রীতি, মহিমা মেধা, অনুপম, অনিক, সামির রহমান, হাসিব, শ্রেষ্ঠা, অর্পিতা, রাসেল আহমেদ, হান্নান হিমু ও রাহিম আহমেদ।

বেশ কয়েক বছর ধরে মঞ্চনাটকে ভৈরব বন্ধুসভা পরিচিত নাম। শুরুটা ২০১৭ সালে। তখন বর্তমান উপদেষ্টা জনি আলমের রচনা ও নির্দেশনায় ভাষা আন্দোলন ও একুশের ওপর বিশেষ মঞ্চনাটক পরিবেশিত হয়। এরপর ভৈরব বন্ধুসভার পরিবেশনায় ‘মহুয়া’, ‘আমরা তোমাকে চিনি’, ‘চন্দ্রাবতী’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘রোমিও জুলিয়েট’ নাটকগুলো দর্শকপ্রিয়তা পায়।

‘ভৈরব বন্ধুসভার নাটক দেখছি চার বছর ধরে। প্রতিটি পরিবেশনা মনোমুগ্ধকর।’
দর্শক শামিম আহমেদ

নির্দেশক সুমাইয়া হামিদ বলেন, ‘প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকি দিনটির জন্য। মঞ্চনাটক আমার ভালো লাগার। নিজেও একসময় মঞ্চনাটকে কাজ করেছি। “লালন” ছিল আমাদের অষ্টম পরিবেশনা। সব কটি পরিবেশনা দর্শকনন্দিত হয়েছে।’

‘লালন’ নাটক পরিবেশনের আগমুহূর্তে মাঠে দর্শকের ঢল নামে। তিল পরিমাণ দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। উচ্ছ্বসিত হয়ে দর্শক শামিম আহমেদ জানান, ‘ভৈরব বন্ধুসভার নাটক দেখছি চার বছর ধরে। প্রতিটি পরিবেশনা মনোমুগ্ধকর।’
আয়োজকেরা বলেন, ‘ভৈরবে মঞ্চনাটকে গতি এনেছে ভৈরব বন্ধুসভা। প্রতিবছর মেলার মঞ্চে বেশ কয়েকটি নাটক মঞ্চস্থ হয়।’

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা বলেন, ‘মঞ্চনাটক হলো সাহিত্যের অনন্য একটি ধারা। এটি মেধার বিকাশ ঘটায়, চেতনার জায়গা প্রসারিত করে। সবার জীবনে একবার হলেও মঞ্চনাটক দেখা উচিত।’

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা