হাজারি ঠাকুর প্রমাণ করে দেন, প্রতিকূলতাই পারে মানুষের সবচেয়ে বড় রূপান্তর ঘটাতে। সৎ, নিষ্ঠা আর পরিশ্রমই যেন তাঁর সফলতার চাবিকাঠি।
‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি সামাজিক উপন্যাস। প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। ইংরেজ শাসনামলের পটভূমিতে লেখক তৎকালীন বামুন রাঁধুনি হাজারি ঠাকুরের জীবনকথা, তাঁর স্বপ্ন পূরণ—খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন বইটিতে।
উপন্যাসটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করে সিলেট বন্ধুসভা। ২৭ জুন বিকেলে প্রথম আলো সিলেট অফিসের বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
উপন্যাসের মূল চরিত্রে হাজারি ঠাকুর, যিনি মধ্যবয়সী একজন ব্রাহ্মণ। পেশায় রাঁধুনি, রাণাঘাট রেলস্টেশনে বেচু চক্রবর্তীর খাবার হোটেলে সাত টাকা বেতনে চাকরি করেন। যদিও তাঁর রান্নার হাত ছিল ভালো; তবে হোটেলের ভেতরের অনিয়ম, দুর্নীতিগ্রস্ত আচরণের বিপক্ষে থাকলেও সামান্য রাঁধুনি হওয়ার কারণে কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না। বিশেষ করে হোটেলের ঝি পদ্ম প্রায়ই হোটেলের খাবার চুরি করতেন, আর সুযোগ পেলেই হাজারি ঠাকুরকে অপমান করতেন। এত অপমান আর বাধার মধ্যেও তাঁর একটা নিজস্ব হোটেল চালু করার স্বপ্ন চাপা পড়ে যায়নি।
ঘটনাক্রমে একদিন বাসন চুরির মিথ্যা দায়ে হাজারি ঠাকুরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, সঙ্গে নিজের চাকরিটাও হারান। এই অপমানজনক ঘটনার পরও তিনি ভেঙে পড়েননি। যেখানে সবাই হার মানে, সেখানেই শুরু হয় হাজারি ঠাকুরের নতুন পথচলা। নিজের হোটেল দেওয়ার স্বপ্ন পূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে বেরিয়ে পড়েন নতুন লড়াইয়ে। বহু জায়গায় ঘুরে বেড়ান। এ সময় তাঁর জীবনে সহায়ক হিসেবে তিন নারীর ভূমিকা অবর্ণনীয়—মেয়ের মতো কুসুম, গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে অতসী, আর এক গৃহবধূ। তাদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে নিজে একটি ছোট্ট হোটেল দেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থাপনা এবং নিজ রান্নার গুণে অল্পদিনের মধ্যেই রাণাঘাটে তাঁর হোটেল হয়ে ওঠে প্রিয় খাবারের গন্তব্যস্থল। দূর থেকেও মানুষ আসে শুধু তাঁর রান্নার স্বাদ নিতে।
হাজারি ঠাকুর প্রমাণ করে দেন, প্রতিকূলতাই পারে মানুষের সবচেয়ে বড় রূপান্তর ঘটাতে। সৎ, নিষ্ঠা আর পরিশ্রমই যেন তাঁর সফলতার চাবিকাঠি। রানাঘাট ছাড়িয়ে তাঁর কৃতিত্ব মুম্বাইয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
পাঠ আলোচনায় বন্ধু অনুপমা দাস বলেন, ‘এটি একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প, যা আমাদের জীবনকে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে।’
চরিত্র বিশ্লেষণ করে বন্ধু সুবর্ণা দেব বলেন, মূল চরিত্রের পাশাপাশি অন্যান্য চরিত্র এ উপন্যাসে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে।
নামকরণের সার্থকতা করে বন্ধু মিনথিয়া রহমান বলেন, ‘স্বপ্ন দেখতে কোনো বয়স লাগে না, তা “আদর্শ হিন্দু হোটেল” বইটি যেন জলজ্যান্ত উদাহরণ।’
পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন, ফয়সাল আহমেদ, সমীর বৈষ্ণব, শতাব্দী দত্ত, জুনায়েদ আহমেদ, কিশোর দাশ, সুমন দাস, ফারিহা হক, গায়েত্রী বর্মণ, দৃষ্টি বর্মণ, শ্রেয়ান ঘোষসহ অন্য বন্ধুরা।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা