মা দিবসে পাঠচক্রের আসর করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা। ১১ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগারো চত্বরে এটি অনুষ্ঠিত হয়। পাঠচক্রের নির্ধারিত বিষয় ছিল পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক সাইফ উদ্দিনের লেখা ‘মাতৃছবি’ কবিতা।
কবিতাটি আবৃত্তি করেন জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক ফারজানা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক সাহেদ শাহরিয়া। এরপর কবিতাটি সম্পর্কে আলোচনা করেন অন্য বন্ধুরা।
সভাপতি পূজা রায় বলেন, ‘মাতৃছবি’ কবিতাটিতে একজন সংগ্রামী মায়ের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। যেখানে বর্ণিত হয়েছে মাকে নিয়ে লেখকের শৈশব থেকে কৈশোরের নানা স্মৃতি।
সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান বলেন, ‘কবিতাটি শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। ভীষণভাবে মায়ের প্রতি ভালোবাসা অনুধাবন হচ্ছিল।’
মাতৃছবি
সাইফ উদ্দিন
আমি জন্মেছিলাম কনকনে এক শীতের রাতে,
মায়ের ওম জড়ানো শরীরে লেপ্টে যেতে।
ভূমিষ্ঠ শিশুর কান্না শুনে—
নানাভাই আজান দিতে দৌড়ে এলেন তসবিহ হাতে।
খালাম্মাদের খুশির কোলাহলে—
চোখ খুলে তাকালাম ধরণির পারে
বেড়ার ফাঁক দিয়ে আসা জ্যোৎস্নার আলোতে,
মা আমায় দেখলেন মুগ্ধ চোখে—
আমিও দেখেছিলাম হয়তো মিটিমিটি চোখে।
মায়ের চোখে মিটিমিটি করে তাকাতে তাকাতে
কেটে গেছে বছর কুড়ি—
মায়ের জন্য স্মৃতিপটে জমা রয়েছে,
কত প্রেম, ভক্তি, ভালোবাসা আর আড়ি।
আমার বয়স যখন বছর দুয়েক,
তখনো ফোটেনি মুখের বুলি—
মানুষ বলত ছেলে তোর বোবাই হবে, বুঝলি!
মা শোনাতেন তাঁর আত্মবিশ্বাসের বাণী,
ছেলে তাঁর কইবে কথা যেদিন হবে প্রয়োজন,
চিন্তা-চেতনায় হবে প্রখর মানুষ একজন!
ছোট্টবেলায় সবাই যখন পড়তে যেত
কিন্ডারগার্টেন আর হরেকরকম নামীদামি স্কুলে,
তখন মা আমায় নিয়ে বসতেন—
উঠানপাড়ের লিচুগাছের তলে।
শেখাতেন স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণের চেহারা ছবি,
ছবি দেখিয়ে চেনাতেন আমায়—
নজরুল রবীন্দ্রনাথসহ আরও কত শত কবি!
কল্পনাতে যখন আঁকি—
নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসার,
তখন মনে পড়ে যায় আমার মায়ের
মলিন মুখের হাহাকার—
চোখে ভেসে ওঠে দুটি হাতের বিরামহীনতার চিত্র।
ক্লান্তিহীনতার প্রলেপে যে হাতে উৎপন্ন হয়েছে—
একজন ববিয়ানের স্বপ্ন।
সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা