ঘর ছাপিয়ে স্বাধীনতার সন্ধানে রবীন্দ্রনাথের ‘অতিথি’

ময়মনসিংহ বন্ধুসভার পাঠের আসরছবি: বন্ধুসভা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অতিথি’ ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যের এক কালজয়ী সৃষ্টি। স্বাধীনতার টান, বালক-মনের আকাঙ্ক্ষা, মানবিক সম্পর্কের উষ্ণতা, ঘর ও বাইরের দ্বন্দ্বে আবর্তিত গল্পটিকে কালজয়ী করেছে। ‘সবুজপত্র’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।

২৮ নভেম্বর বিকেলে ‘অতিথি’ ছোটগল্প নিয়ে পাঠের আসর করে ময়মনসিংহ বন্ধুসভা। শুরুতে বন্ধুরা নিজ নিজ পরিচয় দেন। বন্ধু বোরহান উদ্দিনের সঞ্চালনায় সবাই গল্পের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু, প্রেক্ষাপট এবং গল্পের বর্তমান প্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা করেন।

বন্ধু রুপা চন্দ্র দাস গল্পের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বলেন, এক কিশোর তারাপদ, যে ঘর বাঁধা জীবন পছন্দ করে না। তার অস্থির মন বারবার তাকে ঘর ছেড়ে নতুন নতুন অভিযানে টেনে নিয়ে যায়। একদিন সে এক গ্রাম্য জমিদারবাড়িতে আশ্রয় পায়। জমিদারবাবুর স্ত্রী অনঙ্গমোহিনী তার প্রতি গভীর স্নেহ দেখান; তাকে নিজের ছেলের মতোই আগলে রাখেন। তারাপদও কিছুদিনের জন্য ঘরোয়া উষ্ণতা ও যত্নে মুগ্ধ হয়ে থাকে। কিন্তু পরিণামে তার ভেতরের স্বাধীনতার ডাকে আবার সাড়া দেয়। এক গভীর রাতে কাউকে কিছু না জানিয়ে সে আবার পালিয়ে যায়। কারণ সে ঘর নয়, অভিযানের পথেরই সন্তান। সেই জন্যই সে ‘অতিথি’, কারও ঘরে তার স্থায়ী ঠিকানা নেই।

বন্ধু বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘গল্পটি মূলত স্বাধীনতার অপরিহার্যতা ও মানুষের স্বভাবজাত আকাঙ্ক্ষার অদম্য টান তুলে ধরে। তারাপদ চরিত্রের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন কারও কারও মনই পথিকের মন সংসারের বন্ধন, ভালোবাসা বা নিরাপত্তা তাদের ধরে রাখতে পারে না। স্বাধীনতার ডাকই তাদের সত্যিকারের ঘর। চমৎকার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, সহজ, সাবলীল, কিন্তু গভীর অর্থবহ ভাষা, মানব-স্বভাবের অন্তর্লোককে শিল্পরূপে প্রকাশ—সব মিলিয়ে “অতিথি” ছোটগল্প মূলত পথিক জীবনের রোমান্টিক ও দার্শনিক দৃষ্টি।’

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উম্মে সালমা বলেন, ‘এই গল্প আমাদের বুঝিয়ে দেয়—মানুষের মনকে কখনোই সম্পূর্ণ বেঁধে রাখা যায় না। স্বাধীনতা ও নিজের মতো করে বাঁচার আকাঙ্ক্ষা মানুষের স্বভাবের গভীরে লুকিয়ে থাকে। তারাপদের চরিত্র যেন সেই মুক্ত মননেরই প্রতীক, যে সব বন্ধন অতিক্রম করে নিজের পথ খুঁজে নেয়। রবীন্দ্রনাথ মানুষের অন্তর্লোককে যেভাবে সূক্ষ্মভাবে ধরেছেন, তা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও অনুপ্রেরণাদায়ক।’

পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন সভাপতি মোহাম্মদ খালিদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক রাবিয়াতুল বুশরা, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক তাওমান জাহান, ম্যাগাজিন সম্পাদক মুনমুন আহমেদ, বন্ধু অনিক চন্দ্র দাস, সাদিয়া আক্তারসহ অন্যরা।

সভাপতি, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা