এমসি কলেজ বন্ধুসভার পাঠচক্র ‘যদ্যপি আমার গুরু’

আহমদ ছফার লেখা ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বই
ছবি: বন্ধুসভা

‘যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি বাড়ি যায়
তথাপি তাহার নাম নিত্যানন্দ রায়’
বাংলা কবিতার এই নিত্যানন্দ রায়ের সঙ্গে আবদুর রাজ্জাকের তুলনা করেই ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ের সূচনা হয়। আহমদ ছফার লেখা বইটি নিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর পাঠচক্র করেছে সিলেটের এমসি কলেজ বন্ধুসভা। বেলা ১১টায় মুরারিচাঁদ কলেজের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুরা। এরপর বই কথন করেন পাঠচক্র সম্পাদক ইভা সিদ্দিকী, সদস্য মাজহারুল ইসলাম, উত্তম কুমার প্রমুখ।

গ্রন্থের চরিত্র আবদুর রাজ্জাক নিভৃতচারী, অনাড়ম্বর জ্ঞানসাধক এবং একজন প্রবাদতুল্য পুরুষ। অর্থশাস্ত্র, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য, ধর্ম-সংস্কৃতি—এসব বিষয়ে তিনি অধিক পাণ্ডিত্যপূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপীঠগুলোর শ্রেষ্ঠ মনীষীদের অনেকেই একবাক্যে তাঁর মেধার অনন্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন।

আবদুর রাজ্জাক আহমদ ছফাকে বলেছিলেন, ‘আপনে যখন মনে করলেন কোনো বই পইড়্যা ফেলাইছেন, নিজেরে জিগাইবেন যে বইটা—পড়েছেন নিজের ভাষায়, বইটা আবার লিখতে পারবেন কি না। আপনের ভাষার জোর লেখকের মতো শক্তিশালী না অইতে পারে, আপনের শব্দভান্ডার সামান্য অইতে পারে, তথাপি যদি মনে মনে আসল জিনিসটা রিপ্রোডিউস না করবার পারেন, ধইর‍্যা নেবেন আপনের পড়া অয় নাই।’ আবদুর রাজ্জাক জ্ঞানচর্চার একজন প্রভাবক ছিলেন। ‘গ্রেট ব্রিটেনের বাজেটে ডিফেন্সের চাইতে এডুকেশনে বেশি অর্থ অ্যালট করা হয়। বেঙ্গলের সবচাইতে মিসফরচুন ব্যাপার অইল, এইখানে সাপোর্টিং কলেজ অওনের আগে ইউনিভার্সিটি তৈয়ার অইছে। আর মিডল স্কুল তৈয়ার না কইরা কলেজ বানাইছে। অখন আমাগো দরকার শক্তিশালী মিডল স্কুল হেইদিকে কারও নজর নাই।’ দেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ একটু আগেই অনুমান করার ক্ষমতা ছিল আবদুর রাজ্জাকের।

শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: বন্ধুসভা

‘যখন কোনো নতুন জায়গায় যাইবেন, দুইটা বিষয় পয়লা জানার চেষ্টা করবেন—ওই জায়গার মানুষ কী খায় আর পড়াশোনা কী করে। কাঁচাবাজারে যাইবেন, কী খায় এইডা দেখনের লাইগ্যা। আর বইয়ের দোকানে যাইবেন পড়াশোনা কী করে হেইডা জাননের লাইগ্যা।’ উপরিউক্ত লাইনগুলো আহমদ ছফার শোনা কথার স্মৃতি। অধ্যাপক রাজ্জাককে খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখার যে দুর্লভ সুযোগ আহমদ ছফার হয়েছে, ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটি তার সর্বাঙ্গ প্রমাণ।

পাঠচক্র ও আগামী দিনের কার্যক্রম নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন সভাপতি তানভীর মাহফুজ। আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি বিপ্রজিত কর, সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা, সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম দাস, অর্থ সম্পাদক ফারহানা আক্তার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শান্তা দাস, প্রশিক্ষণ সম্পাদক পাপড়ি তালুকদার, সদস্য ফাহাদ আহমদ, রুহেল আহমদ, শেফালী বেগম, ইতি দে, রুহুল আমিন, সাজ্জাদুর রহমান, রুবেল ফারহিন, মেহেদী হাসান, সুমি বেগম, সুজন চন্দ্র, তোবা সিদ্দিকী ও শাম্ম উদ দোহা।

বন্ধু, এমসি কলেজ বন্ধুসভা