সাগরকন্যা কুয়াকাটায় ড্যাফোডিল বন্ধুসভা

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে ফ্রেমে বন্দী বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

ভ্রমণ! মাত্র একটি শব্দ হলেও এটিতে লুকিয়ে থাকে নতুন মানুষ, তাদের সংস্কৃতি আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের গল্প। ভ্রমণ মানে আনন্দের সঙ্গে নতুন কিছুর অভিজ্ঞতা অর্জন। এই আনন্দ যখন বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে, তখন আমরা তার অভিজ্ঞতার গল্পে মেতে উঠি। অন্যের কাছে সেই অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করি। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে গিয়ে ঠিক তেমনি এক ভ্রমণের সাক্ষী হলো ড্যাফোডিল বন্ধুসভার বন্ধুরা।

ঢাকা থেকে ৩৮০ কিলোমিটার দূরে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এখানেই কেবল একইসঙ্গে সমুদ্রে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায়। সৈকতটির দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার। এটিকে সাগরকন্যাও বলা হয়। এ যেন সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের বেলাভূমি। এমন নৈসর্গিক স্থান ঘুরে আসতে বন্ধুরা ৪ মে সাগরকন্যার উদ্দেশে পাড়ি জমান।

সমুদ্রকে সাক্ষী রাখা!
ছবি: বন্ধুসভা

রাত তখন ৯টা। ধানমন্ডির কলাবাগান থেকে একদল বন্ধু রওনা দেন কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের উদ্দেশে। সবার চেহারায় প্রাণের স্ফুরণ ও প্রবল ভাবাবেগ। কেউ ড্যাফোডিল বন্ধুসভার হয়ে প্রথমবার যাচ্ছে, কেউ প্রথম কোনো সমুদ্রসৈকতের অভিজ্ঞতা নিতে যাচ্ছে, আবার কেউ দ্বিতীয়বার যাচ্ছে। সবার মধ্যে প্রবল উচ্ছ্বাস। ভ্রমণে সঙ্গী হয়ে এই আনন্দ উচ্ছ্বাসকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন ড্যাফোডিল বন্ধুসভার উপদেষ্টা বিনয় বর্মন। এ ছাড়াও ছিলেন সাবেক বন্ধুরা।

তীব্র যানজটের শহর ঢাকা ছেড়ে বাস যখন পদ্মা সেতু পার হচ্ছিল, বন্ধুদের মধ্যে তখন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের জোয়ার। গিটারের সুরে, ঢোলের তালের সঙ্গে গানের শব্দে মুখর পুরো বাস। নাচ, গান ও আড্ডায় মুখর হয়ে ওঠে আমাদের যাত্রাপথ। এদিকে গাড়ি চলছে তার নিজস্ব গতিতে; জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দিতেই মনে হলো আকাশ আজ বড্ড অভিমানী। কিছুক্ষণ পর মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মেঘগুলোয় জমে থাকা সব অভিমান যেন অঝোর বৃষ্টিতে রূপ নিয়ে ঝরতে শুরু করে। রাত দুইটার দিকে বরিশালের একটি রেস্তোরাঁয় যাত্রাবিরতি। যাত্রাবিরতি শেষে আবারও বাস চলতে থাকে। ভোর পাঁচটায় কলাপাড়া উপজেলায় পৌঁছে নির্দিষ্ট হোটেলে চেক-ইন করে সবাই বিশ্রাম নেন।

যেন একটি পারিবারিক ছবি!
ছবি: বন্ধুসভা

সকালে একটি রেস্তোরাঁয় নাশতা সেরে আটটার দিকে চারটি অটোরিকশায় করে রওনা হই ঝাউবনের উদ্দেশে। এক ঘণ্টার গন্তব্য পথ। কাজুরা এলাকা থেকে ঝাউবন যাওয়ার পথটা সরু ও বালুকণাময়। চলতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই রিকশার চাকা দেবে যাচ্ছিল সামুদ্রিক বালুতে। রাস্তার এক পাশে দু-একটা ঘরবাড়ি, অন্য পাশে সমুদ্রের বিশালতা আর গর্জন। ৯টার দিকে ঝাউবনে পৌঁছে কেউ কেউ সমুদ্রের ঢেউয়ে পা ভেজান, আবার কেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরপর বন্ধুরা চলে যান ২০০ বছরের পুরোনো পালতোলা জাহাজ দেখতে। জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র এক মিনিটের রাস্তা। এভাবে আমরা শুঁটকিপল্লি, লেবুর চর, কুয়াকাটার কুয়া, মিস্ত্রি পাড়া বৌদ্ধমন্দিরসহ আরও বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখি।

দুপুরের খাবারে ছিল সামুদ্রিক মাছের সমাহার, স্বাদে অতুলনীয়। খাবার শেষে আবারও হোটেলে ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন সবাই। গোসলের জন্য বিকেল চারটার দিকে সবার গন্তব্য সমুদ্রসৈকতে। ছবি তোলা, সমুদ্রের পাড়ে আড্ডা, সন্ধ্যার আকাশে ভরা পূর্ণিমা উপভোগ করা। কেউ সমুদ্রে দাঁড়িয়ে পায়ে শীতল পানির ঢেউয়ের স্পর্শ নিচ্ছেন, কেউ খোশগল্পে মত্ত, আবার কেউ স্থানীয় মার্কেটে ঘোরাঘুরি করছেন। সন্ধ্যার পর রাতের খাবার খেয়ে সবাই ফিরে যান হোটেলে। রাত ১০টায় হোটেলের বারান্দায় আয়োজন করা হয় বন্ধু আড্ডার। আড্ডায় বিভিন্ন ধরনের মজাদার খেলাধুলা ও নাচের আয়োজন ছিল। গান পরিবেশন করে পুরস্কার জিতে নেন নাজমুল অভি ও বিজন সরকার।

কুয়াকাটার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে
ছবি: বন্ধুসভা

আড্ডা শেষে উপদেষ্টা বিনয় বর্মন অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘তোমাদের সঙ্গে ভ্রমণে এসে আমি যেন সেই তারুণ্য ফিরে পেয়েছি। তোমাদের নেতৃত্বে এগিয়ে যাক ড্যাফোডিল বন্ধুসভা।’ বন্ধু আনিকা মিম বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো জীবনে প্রথমবার সমুদ্র দেখতে এসেছি; তা–ও আবার ড্যাফোডিল বন্ধুসভার সঙ্গে। সত্যিই প্রাণবন্ত একটি সফর। স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সবাই অনেক ভালো।’

দ্বিতীয় দিনের প্রথম পরিকল্পনা ছিল সূর্যোদয় দেখা। ভোরে ঘুম থেকে উঠে সবাই মিলে যাই গঙ্গাবতীর তীরে; যেখান থেকে সূর্যোদয় খুব ভালোভাবে দেখা যায়। দ্বিতীয় দিনে বন্ধুরা সকালে সূর্যোদয় ও বিকেল বেলায় সূর্যাস্ত উপভোগ করেন। এ ছাড়াও দিনব্যাপী পুরাতন বৌদ্ধমন্দির, রাখাইন তাঁতিপল্লি, কাউয়ার চর, লাল কাকড়ার চরসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেন। সন্ধ্যাবেলায় আশপাশের লোকাল মার্কেটগুলোয় ঘোরাঘুরি ও কেনাকাটা পর্ব চলে। রাতের খাবার শেষে আবারও ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা।

প্রচার সম্পাদক, ড্যাফোডিল বন্ধুসভা