ওবায়েদ হকের ‘জলেশ্বরী’ উপন্যাস নিয়ে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার পাঠচক্র
কথাসাহিত্যিক ওবায়েদ হকের ‘জলেশ্বরী’ উপন্যাস মূলত ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পটভূমিতে রচিত একটি সমকালীন ঘটনা, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত একটি জনপদের করুণ বাস্তবতা ও মানবিক সংকটকে গভীরভাবে তুলে ধরেছে। হিরণ্ময় কথকতা সিরিজের অংশ হিসেবে উপন্যাসটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে চট্টগ্রাম বন্ধুসভা। ৯ মে বিকেলে চট্টগ্রাম বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘জলেশ্বরী উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কাজল যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাসরত একজন প্রবাসী। তার পিতা মাহতাব ভুঁইয়ার মৃত্যুর পর, সে একটি রহস্যময় চিঠি খুঁজে পায়, যেখানে উল্লেখ রয়েছে ইব্রাহিম গাজী নামক একজন ব্যক্তি সম্পর্কে। এই চিঠির সূত্র ধরে কাজল বাংলাদেশের একটি বন্যাকবলিত গ্রাম জলেশ্বরী বা স্থানীয়ভাবে পরিচিত জলছরের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
জলেশ্বরীতে পৌঁছে সে দেখতে পায় একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদ; যেখানে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি—সবই পানিতে নিমজ্জিত এবং মানুষের লাশ ভেসে বেড়াচ্ছে। এই গ্রামে সে দুজন বাচাল মাঝির সহায়তায় ইব্রাহিম গাজীর খোঁজে নেমে পড়েন। তবে এই অনুসন্ধান সহজ হয়ে ওঠে না। বরং তাঁকে বিভিন্নভাবে প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়।
এই যাত্রায় কাজলের সঙ্গে পরিচয় হয় তাপশী নামের এক তরুণীর; যে কলেরা আক্রান্ত গ্রামে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। তাপশীর সঙ্গে কাজলের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, এবং তারা একসঙ্গে বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হতে থাকে। দুর্ভাগ্যবশত একদিন তাপশী নিজেই কলেরায় আক্রান্ত হয় এবং তাকে বাঁচানোর জন্য কাজল নানা বিপদের সম্মুখীন হয়। অবশেষে কাজল জানতে পারে যে ইব্রাহিম গাজী আসলে তার পিতারই আরেকটি পরিচয়। এই সত্য উদ্ঘাটনের মাধ্যমে কাজল তার পিতার অতীতের পাপ ও আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে অবগত হয়।
বন্ধু তৃষা বড়ুয়া বলেন, ‘এই উপন্যাসের বর্ণনা শুনে মনে হলো কোনো সিনেমা দেখছি। লেখক এমনভাবে এই বইটিতে গুছিয়ে লিখেছেন, যা প্রশংসার দাবিদার। বাংলা সাহিত্যে এমন কিছু বই নিয়ে আলোচনা শুনতে ভালোই লাগে।’
পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু কামরান চৌধুরী, আফিফ ইব্রাহিম, ফয়সাল হাওলাদার, মোফাজ্জল হোসেন ও অনামিকা দাশ।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা