বয়স নয়, ইচ্ছাশক্তি ও স্বপ্নই উৎসাহ

৫৬ বছর বয়সে পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন খুলনা বন্ধুসভার বন্ধু শাম্মী আক্তারছবি: ইমন মিয়া

১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার বিছালি ইউনিয়নের রুখালী গ্রামের কাজীবাড়িতে জন্ম শাম্মী আক্তারের। স্থানীয় মির্জাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয় বছর বয়সে ভর্তি হন তিনি। প্রাথমিক শেষে মির্জাপুর হাইস্কুলে ভর্তি হন ১৯৮৮ সালে। দশম শ্রেণিতে থাকাকালে শাম্মী আক্তার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, সেখানেই তাঁর লেখাপড়ার ইতি ঘটে।

খুলনা বন্ধুসভার বন্ধুদের জীবনের গল্প শোনার আসরের দ্বিতীয় পর্বে অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন শাম্মী আক্তার (৫৬)। বন্ধুদের শোনান নিজের জীবনের গল্প, যেখানে উঠে আসে শৈশব, সংগ্রাম, ৫৬ বছর বয়সে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার গল্প, স্বপ্ন আর অভিজ্ঞতার ঝুলি।

৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রথম আলো খুলনা অফিসে এই আসর বসে। শাম্মী আক্তারের ৫৬ বছর বয়সে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আসার অনন্য জয়যাত্রায় বন্ধুসভার বন্ধুরা তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

লেখাপড়ার আসক্তি
সংসারজীবন, সে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ! একে একে দুই পুত্রসন্তানের জননী হন শাম্মী আক্তার। ইচ্ছাশক্তির কাছে বয়স কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। লেখাপড়ার প্রতি যে প্রবল আগ্রহ, সেটি তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। সংসারের বেড়াজালের মধ্যে থেকেও দুই সন্তানকে বানিয়েছেন গ্র্যাজুয়েট। তারপর ছোট ছেলের ইচ্ছা এবং নিজের মধ্যে থাকা সুপ্ত বাসনা থেকে ভর্তি হন দশম শ্রেণিতে। বি কে ইনস্টিটিউট থেকে ২০২৩ সালে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। উচ্চমাধ্যমিক ভর্তি হন সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজে। এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ–৩.১৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এ সাফল্যকে বন্ধুসভার বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে পেরে ভীষণ খুশি।

শাম্মী আক্তার বলেন, ‘রান্নাবান্না, ঘর গোছানো, স্বামী-সন্তানদের খেতে দিয়ে রাত ১১টার সময় পড়তে বসতাম। সাংসারিক জীবনে অনেক প্রতিকূলতা এসেছে, কিন্তু লক্ষ্য হারাইনি।’

শাম্মী আক্তারকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন খুলনা বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: ইমন মিয়া

নারীশক্তির অনুপ্রেরণা
শাম্মী আক্তার স্নাতকে ভর্তি হবেন এবং স্নাতক শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত হতে চান। তাঁর জীবনের একটিই আক্ষেপ, মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সময় মা তাঁর পাশে ছিলেন। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকের এই সাফল্য মায়ের সঙ্গে ভাগ করে নিতে না পারার আক্ষেপ আজীবন রয়ে যাবে। তাঁর প্রত্যাশা, ৫৬ বছর বয়সে লেখাপড়ার এই আত্মতৃপ্তির পূর্ণতা সমাজে নারীদের অনুপ্রাণিত করবে।

বন্ধুত্বে ভরা আয়োজন অনুষ্ঠানের শেষে মিষ্টিমুখর হয়ে ওঠে পরিবেশ। উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর খুলনা প্রতিনিধি উত্তম মণ্ডল, খুলনা বন্ধুসভার সহসভাপতি এম এম মাসুম বিল্যাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারজানা যূথী, অর্থ সম্পাদক ইমন মিয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক দীপু রায়, কার্যনির্বাহী সদস্য হাফিজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রহমাতুল্লাহ, বন্ধু হাসিবুর রহমান, আবু বক্কর, খোশ নসিব, মিতা মাহমুদ, আল রাইসা, ফারিয়া ঝিলামসহ আরও অনেকে।