বাক্‌প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সহায়তা করল নোয়াখালী বন্ধুসভা

নোয়াখালী বন্ধুসভার উপহার দেওয়া নতুন শার্ট ও লুঙ্গি পরে আছেন মো. ছানাউল্লাহ (মাঝে)
ছবি: বন্ধুসভা

গ্রামের কারও বাড়িতে গাছ থেকে নারকেল-সুপারি পাড়া দরকার—ডাক পড়ত ধনা মিয়ার। কারও কোনো জিনিসপত্র আনা–নেওয়া করতে হবে—সাহায্যের জন্য হাজির হতেন ধনা মিয়া। প্রতিদানে পেতেন সামান্য কিছু টাকা কিংবা খাবার। তাতেই কোনো রকমে অতিবাহিত হতো তাঁর জীবন।

ধনা মিয়ার আসল নাম মো. ছানাউল্লাহ। গ্রামবাসী তাঁকে আদর করে এই নামে ডাকেন। জন্মের পর থেকেই কথা বলতে পারেন না। মানসিক ভারসাম্যও কম। এভাবেই কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের ৫০টি বসন্ত। সৃষ্টিকর্তা ধনা মিয়ার কণ্ঠস্বর না দিলেও কাজ করে খাওয়ার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। বছর কয়েক আগে গাছ থেকে পড়ে ভেঙে যায় তাঁর শরীরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাঁড়। এর পর থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। হারিয়ে ফেলেন কাজ করার ক্ষমতা।

প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি করে ভালো কাজ’-এর অংশ হিসেবে ৩০ অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে হাজির হন বন্ধুসভার বন্ধুরা। উদ্দেশ্য ধনা মিয়ার পাশে দাঁড়ানো। এর আগের দিন তাঁর জন্য এক জোড়া শার্ট, লুঙ্গি, টি-শার্ট, গামছা এবং কিছু শুকনা খাবার কেনেন বন্ধুরা।

ধনা মিয়ার ঘরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে তাঁর দুর্বিষহ জীবনের দৃশ্য। এক রুমের ছোট্ট একটি টিনের ঘরে বসবাস। জিনিসপত্র এলোমেলো হয়ে আছে। অথচ একটা সময় তাঁর সংসার ছিল। বিয়েও করেছিলেন। ভারসাম্যহীন এ মানুষটিকে ছেড়ে চলে যান স্ত্রী। একদম একা হয়ে পড়েন। মানুষ খেতে দিলে খেতে পান, না দিলে খেতেও পান না। কাজ করে খাওয়ারও ক্ষমতা নেই।

নোয়াখালী বন্ধুসভার উপহার পেয়ে ধনা মিয়ার চোখমুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। হয়তো তিনি কিছু বলতে চাইছেন। হাতের ইশারায় কিছু বোঝাতেও চাইলেন। তিনি যে খুব খুশি হয়েছেন, এটাই বোঝাতে চেয়েছেন। তৎক্ষণাৎ নতুন জামা ও লুঙ্গি পরে ফেলেন।

বাক্‌প্রতিবন্ধী মো. ছানাউল্লাহ
ছবি: বন্ধুসভা

স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘গ্রামে কারও বিয়া অইলে ধনা মিয়া খাইতে যান। ভালো জামাকাপড় না থাকায় পরে যাইতে পারে না। অন তুন ধনা মিয়া নতুন জামা পরে বিয়া খাইতে যাবে।’

আগামী দিনেও পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নোয়াখালী বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাকিব বলেন, ‘আমাদের চারপাশে এ রকম অনেক মানুষ আছে, তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা উচিত। পাশে দাঁড়ানো উচিত। আমাদের ছোটখাটো কোনো যত্নে তারা একটু হলেও ভালোবাসা অনুভব করবে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আসিফ আহমেদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সামান্তা, অর্থ সম্পাদক উম্মে ফারহীন, বন্ধু সানি তামজিদসহ অন্য বন্ধুরা।

সাধারণ সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা