সম্পর্কে মানসিক পরিপক্বতার প্রতিচ্ছবি ‘শেষের কবিতা’

সিলেট বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: সমরজিৎ হালদার

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি, লেখক, সংগীতকার, নাট্যকার ও দার্শনিকদের একজন। তাঁর রচনা বিশ্বের নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনিই প্রথম ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান। তাঁকে ‘কবিগুরু’, ‘বিশ্বকবি’ নামে ভূষিত করা হয়।

‘শেষের কবিতা’ রবিঠাকুরের অনবদ্য সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম। এটি তাঁর দশম উপন্যাস। প্রণয়, সম্পর্ক, আত্ম-অন্বেষণের সূক্ষ্ম দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে এই উপন্যাসে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অমিত রায় ও লাবণ্য। দুটি চরিত্রই ব্যতিক্রমী ও আত্মবিশ্বাসী। শিলং ভ্রমণের সময় একটা দুর্ঘটনার মাধ্যমে অমিত রায়ের সঙ্গে লাবণ্যের পরিচয়। অতঃপর প্রণয়, একই সঙ্গে চলতে থাকে দার্শনিক মননচর্চা।

অমিত রায় পড়াশোনা করা এক আধুনিক আত্মবিশ্বাসী যুবক; যে জীবন, প্রেম, সমাজ নিয়ে নিজের মতো চিন্তা করে। অন্যদিকে লাবণ্য শিক্ষিতা, সংবেদনশীল, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নারী; যে মোহে পড়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। উপন্যাসের আরও দুটি চরিত্র যেমন কেতকী আর শোভনলাল। কেতকী, যাকে অমিতের পরিবারের পছন্দ; এমনকি অমিতেরও একসময় পছন্দ ছিল। অন্যদিকে শোভনলাল, যে কিনা লাবণ্যকে পছন্দ করে; তবে তার বাবা বিষয়টি জানার পর লাবণ্যের বাবাকে অপমান করায় সে আর লজ্জায় লাবণ্যের সামনে যায়নি। বাস্তববাদী লাবণ্য যখন বুঝতে পারে অমিতের প্রণয়ে আবেগ থাকলেও তা দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের কোনো পরিপক্বতা নেই। বাস্তবে প্রয়োজন এমন জীবনসঙ্গী, যার সঙ্গে মানসিক স্থিতি ও জীবনদর্শন মেলে। লাবণ্য সরে আসে। অমিতও তা মেনে নেয়। পরবর্তী সময়ে দুজনার জীবন জুড়ে যায় কেতকী আর শোভনলালের সঙ্গে।

‘শেষের কবিতা’ শুধু প্রেমের গল্প নয়, এটি আত্মদর্শন, মানসিক পরিপক্বতা এবং সম্পর্কের গভীরতা বোঝাপড়ার প্রতিচ্ছবি। এ উপন্যাসে নারীর স্বাধীন চিন্তাধারা ও আত্মপরিচয়ের গুরুত্বকে সামনে এনে দেয়, যা আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক।

৯ মে উপন্যাসটি নিয়ে পাঠচক্রের আসর করে সিলেট বন্ধুসভা। প্রথম আলো সিলেট অফিসের বন্ধুসভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়। পাঠচক্রে উপন্যাসটির প্রকাশকাল, বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বই পর্যালোচনায় বন্ধু নাহিয়ান রাহমান বলেন, ‘উপন্যাসটি প্রেম, দর্শন ও আত্মসচেতনতার এক অসামান্য মিলন।’
বন্ধু সুবর্ণা দেব বলেন, ‘লাবণ্য চরিত্রটি রবিঠাকুরের সফল নারী চরিত্র। তার আত্মমর্যাদা, বিচক্ষণতা ও সম্পর্ককে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা সত্যিই দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো।’

পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন, ফয়সাল আহমেদ, সমরজিৎ হালদার, গায়েত্রী বর্মন, দৃষ্টি বর্মন, অনুপমা দাস, কিশোর দাশ, প্রত্যাশা তালুকদার, প্রীতম তালুকদার, শাহরিয়ার হক, ফারিহা হক, মিনথিয়া রহমান, শতাব্দী দত্ত, যুবরাজ রায়, অম্লান রায়সহ অন্যান্য বন্ধুরা।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা