পাঠচক্রের আসরে আত্মউন্নয়নমূলক বই ‘লোকে কী বলবে’

ভৈরব বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসর
ছবি: রাসেল আহমেদ

শহীদ আজাদের মা যখন আজাদের সঙ্গে শেষবারের মতো থানায় দেখা করতে যান, তখন আজাদ তাঁকে বলেন, ‘ওরা আমাকে অনেক মারে মা, সহ্য করতে পারি না’। মা বলেন, ‘সহ্য করবা, শক্ত থাকবা, কারও নাম-ঠিকানা বলবা না’। আজাদ সহ্য করে যান, কিছুই বলেন না। সেদিন আজাদের মতো হাজারো মানুষ হাল ছেড়ে দেননি বলেই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ পেলাম আমরা। পাঠের আসরে কথাগুলো বলেন ভৈরব বন্ধুসভার কার্যনির্বাহী সদস্য প্রিয়াংকা।

৪ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রথম আলোর ভৈরব অফিসে মুদ্রিত বই পড়ার দলগত পাঠচক্রে বসেন ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা। ১৫৮তম পাঠের আসরটি সঞ্চালনা করেন পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক জান্নাতুল মিশু। এবারের বিষয় ছিল আয়মান সাদিক ও সাকিব বিন রশিদের লেখা আত্মউন্নয়নমূলক বই ‘লোকে কী বলবে’।

শুরুতেই শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের সহধর্মিণী অধ্যাপক পান্না কায়সারের মৃত্যুতে শ্রদ্ধাস্বরূপ ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

কাজ করতে গিয়ে অন্যদের মন্তব্য গায়ে না মেখে বরং আত্মবিশ্বাসী মনোভাব তৈরি করে সামনের পথে অগ্রসর হয়ে নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্রে সেরা হয়ে উঠতে পারাই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য! এতেই আসবে সফলতা, বলেন পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক জান্নাতুল মিশু। বইটির লেখক আয়মান সাদিক ও সাকিব বিন রশিদকে নিয়ে আলোচনা করেন দপ্তর সম্পাদক আনাস খান ও বন্ধু শাহরিয়ার সাদাব।

পাঠচক্র শেষে বন্ধুরা
ছবি: রাসেল আহমেদ

‘লোকে কী বলবে’ বইটি মোট ৩৬টি অংশে বিভক্ত। প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে শিক্ষণীয় আলোচনা। জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক তানশি নাহার আলোচনা করেন, ‘তোকে নিয়ে কত আশা করছিলাম’ এবং ‘মেয়ে মানুষ এত বেশি কথা বলেন কেন?’ এই দুটি বিষয় নিয়ে। বন্ধু প্রাপ্তি ঘোষ আলোচনা করেন, ‘তুমি এত প্রশ্ন করো কেন’ এবং ‘এই পিচ্চি’ নিয়ে। কার্যনির্বাহী সদস্য প্রিয়াংকা আলোচনা করেন ‘গল্পের বই বাদ দিয়ে পড়ার বই পড়ো’ এবং ‘এই প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে’ বিষয়ে। বন্ধুরা মোট ১২টি অংশ নিয়ে আলোচনা করেন।

নানা সংকীর্ণতাকে পাশে ঠেলে রেখে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার মন্ত্রণা পাওয়া গেল সবার আলোচনায়। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা বলেন, ‘বইয়ের প্রতিটি বিষয় আমাদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ভৈরব বন্ধুসভার নিয়মিত আসর পাঠচক্র, মুদ্রিত বই পড়ার এই দলগত আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো, তরুণ প্রজন্মকে পাঠের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা।’

আলোচনায় আরও যুক্ত হন উপদেষ্টা আলাল উদ্দিন, জনি আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিদরাতুল রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেনসহ আরও অনেকে। সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসেন বলেন, ‘ভৈরব বন্ধুসভার পাঠচক্র মফস্‌সল ছাড়িয়ে দ্যুতি ছড়াচ্ছে দেশব্যাপী। প্রতিটি পাঠের আসরেই নতুন কিছু শিখতে পারি।’

সভাপতি নাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা সবাই সফল হতে চাই। কেউ ব্যর্থতা স্বীকার করতে চাই না। কোনো কাজে আটকে যাওয়া মানেই থেমে যাওয়া নয়। ব্যর্থতাই হলো সফলতার প্রথম সোপান। ভৈরব সভার পাঠচক্র আমাকে দেয় জ্ঞানের অক্সিজেন, যা ধারণ করে বিকশিত হচ্ছে চিন্তাশক্তির জায়গা।’

আলোচনা শেষে কুইজ পর্ব শুরু হয়। পাঠের আসরে মনোযোগী শ্রোতা বন্ধুরা এতে অংশ নেন। বিজয়ী হন শাহরিয়ার ইবাদ, অন্বেষা ও অঙ্কুর চক্রবর্তী। তাঁদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় বই।

পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা