প্রজনন স্বাস্থ্য সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে আকস্মিক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন কিশোরীদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। এ সময় তাদের বেড়ে ওঠা ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে নানা তথ্যের প্রয়োজন হয়। অথচ আমাদের দেশে প্রজনন ইস্যুটি এতটাই স্পর্শকাতর যে এ সম্পর্কে আলোচনা করাকে লজ্জার বিষয় হিসেবে দেখা হয় এবং অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা করা হয় না। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে সঠিক ধারণা পায় না। যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, তাদের ছেলেমেয়েরা প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে একেবারেই ধারণা রাখে না। আর যাদের ধারণা আছে, তাদের বেশির ভাগের পক্ষেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য উপকরণ যেমন স্যানিটারি ন্যাপকিন ক্রয় করার সামর্থ্য থাকে না।
কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করতে চা-বাগানের ছেলেমেয়েদের নিয়ে ‘কৈশোরকালীন প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সচেতনতামূলক কর্মশালা’ এবং ‘ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং’ ক্যাম্পেইন করেছে সিলেট বন্ধুসভা। ১৪ সেপ্টেম্বর সিলেটের দলদলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পেইনে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় করা হয়। পাশাপাশি সিলেট বন্ধুসভার পক্ষ থেকে অর্ধশতাধিক কিশোরী, শিক্ষিকা এবং নারী অভিভাবকের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করা হয়।
কর্মশালায় উপস্থিত শিক্ষার্থী ও কিশোরীদের মধ্যে পুষ্টি সচেতনতা বিষয়ে আলোচনা করেন অতিথি ও বিশেষজ্ঞরা। দলদলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পম্পা চক্রবর্তী বলেন, ‘এখানে চা–বাগানের বাচ্চারা অনেক অবহেলিত। তারা তাদের বিদ্যমান সুযোগ–সুবিধা পাচ্ছে না। কারণ, পিতামাতার আয়রোজগার খুবই সামান্য। বিদ্যালয়টিতে সুপেয় পানির বড় অভাব। আশপাশে কোনো নলকূপও নেই। শিক্ষার্থীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।’ বন্ধুসভার বন্ধুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এখানে আসছেন, এতে আমরা খুব খুশি হয়েছি।
স্থানীয় মেম্বার আবুল কাসেম খালেদ বলেন, ‘আপনারা আমাদের এখানে এসেছেন, আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি আগামী দিনে আরও বড় পরিসরে এই কাজগুলো করবেন।’
কর্মশালায় অংশ নেওয়া কিশোরীরা বলে, ‘আমরা আগে এসব বিষয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করা তো দূরের থাক, নিজেরাই এসব বিষয়ে ভালোভাবে জানতাম না। আজকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। বান্ধবীদের সঙ্গেও এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যাতে তারাও সচেতন হতে পারে।’
কর্মশালা ও ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে সন্ধানীর জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইউনিট। সমন্বয় করেন বন্ধু দীপান্বিত সেন ও মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিপন কুর্মী, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ঊষা দাসসহ অভিভাবকরা। বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন সমীর বৈষ্ণব, লাবাহ্ সুন্নাহ রহমান, গায়ত্রী বর্মন, মাজেদুল ইসলাম, ফয়সাল আহমেদ, ফারহানা হক, সুবর্ণা দেব, অনুপমা দাস, জয় তালুকদার, জুনেদ আহমেদ, কৃত্য ছত্রীসহ অন্য বন্ধুরা।
সভাপতি, সিলেট বন্ধুসভা