কম্বল পেয়ে শীত থেকে বাঁচতে পারবান

উপহারের কম্বল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন শীতার্তরা
ছবি: বন্ধুসভা

মুন্সিগঞ্জ জেলেপাড়ার সুন্দরী বালার চোখমুখ পেটে চৌচির হয়ে গেছে। পানির অভাবে বিলের মাটি ফেটে যেমন চৌচির হয়, অনেকটা তেমনই। দেখে মনে হয়, বয়স হয়েছে ৮০–এর বেশি। প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে যেয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর নদীতে মাছ ধরে তিন মেয়ে নিয়ে সংসার চালিয়েছেন। নানা রোগে অসুস্থ হয়ে এখন আর কাজ করতে পারেন না। কম্বল হাতে পেয়ে যেন তাঁর আনন্দ ধরে না। কয়েকবার সালাম দিলেন বন্ধুসভার বন্ধুদের। বললেন, ‘কম্বল পেয়ে শীত থেকে বাঁচতে পারবান।’

১৮ ও ১৯ জানুয়ারি বন্ধুরা সাতক্ষীরা শহর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরের সিংহড়তলী, চুনকুড়ি, হরিনগর, জেলেপাড়া, মথুরাপুর, ঋষিপাড়া, দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনীসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বিধবা, মুন্ডা, হরিজনসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ১৪০ জন শীতার্ত মানুষের তালিকা তৈরি করেন। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে সিংহড়তলী গ্রামের প্রথম আলো দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র চত্বরে তাঁদের হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়।

প্রথম আলো দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র চত্বরে কম্বল বিতরণ করা হয়
ছবি: বন্ধুসভা

পরে মুন্সিগঞ্জের টাইগার পয়েন্টে দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী, নীলডুমুর, দুর্গাবাটি, পুড়াকাটলা ও মাদিয়া গ্রাম ঘুরে আরও ৬০ জন শীতার্ত মানুষকে কম্বল উপহার দেন বন্ধুরা।

ফুলমতি মুন্ডা নামের এক নারী বলেন, ‘কনকনে ঠান্ডার সাথে বাতাসে কষ্ট পাতিলাম। শীতের প্রথমে একখানা কম্বল নয়েছে, তা ফুটো হয়ে গে। মাটির ঘরের বেড়ার ফাঁক দে সন্ধ্যার পর থেকে যেন বরফ পড়ে। নাত যেন শেষ হয় না। বাঁচি আছি যে কেমন করে, তা বলতি পাত্তিনে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিংহড়তলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি জিয়াউর রহমান, প্রধান শিক্ষক আবদুল রব, সহকারী শিক্ষক কল্পনা রানী, ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম, হাসেম আলী, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি, সাতক্ষীরা বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক মৌটুসী চ্যাটার্জী, ম্যাগাজিনবিষয়ক সম্পাদক মাসকুরা আক্তার, বইমেলা সম্পাদক সাগরিকা আক্তার, বন্ধু জাহিদা জাহানসহ অন্যান্য বন্ধুরা।

সভাপতি, সাতক্ষীরা বন্ধুসভা