আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস উপলক্ষে সাংগঠনিক আড্ডা ও বিশেষ আলোচনা সভা করেছে গাজীপুর বন্ধুসভা। ৫ ডিসেম্বর বিকেলে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। ‘স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আমার প্রাপ্তি ও বন্ধুসভা’ শিরোনামে এই আড্ডায় বন্ধুরা নানা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
বন্ধু নাজমুল হোসাইনের সঞ্চালনায় পরিচয়পর্বের পর শুরুতেই পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সংগঠন করি বলে নিজের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ভালো কাজ করার চেষ্টা করি। আমাদের সবার উচিত মাদার তেরেসার জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। সংগঠন থেকে অনেক কিছু শিখেছি। গত কয়েক বছর ধরে বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত আছি। এখন যা কিছু জানি প্রায় সবকিছুতে বন্ধুসভার অবদান রয়েছে।’
প্রশিক্ষণ সম্পাদক শাহরিয়ার মণ্ডল বলেন, ‘আজ একটা খবর পেলাম পুকুরে কুকুরের বাচ্চা পড়ে আছে। অনেকে দেখেছে, তাদের মধ্যে একজন আমায় ফোন দিয়ে জানাল; কিন্তু কুকুরের বাচ্চাটাকে সহায়তা করল না। আমি গিয়ে কুকুরের বাচ্চাটাকে পুকুর থেকে উঠিয়ে সেবা করলাম এবং সুস্থ হয়ে গেল। সংগঠন থেকে আমার প্রাপ্তির অনেক কিছুর মধ্যে একটা মজার ঘটনা বলি—কয়েক বছর আগে সিলেটের বন্যায় কয়েক দিন ত্রাণ বিতরণ করেছিলাম। মজার বিষয় হলো, এর প্রায় দুই বছর পর যখন আবার সিলেট ঘুরতে গেলাম, ওই এলাকার মানুষ আমাকে চিনতে পেরে বুকে জড়িয়ে নিলেন। এটা এক অন্য রকম ভালো লাগার অনুভূতি।’
জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক আবিদা সুলতানা বলেন, ‘আমি অনেক সংগঠনে যুক্ত ছিলাম, এখন শুধু বন্ধুসভায় আছি। সংগঠন আমায় অনেক কিছু দিয়েছে। খুব ইচ্ছা আমি অনেক গাছ রোপণ করব, অনেক মানুষকে সহায়তা করব; আমি একা হয়তো এটা পেরে উঠতাম না। বন্ধুসভার ভালো কাজগুলো মাধ্যমে আমার বৃক্ষরোপণ, শীতবস্ত্র বিতরণ কিংবা সারা বছর কত ভালো কাজ করতে পারি।’
বন্ধু রাবেয়া আক্তার, রাশেদ হাসান, সোনিয়া আক্তার, রাহুল সরকার, আশা আক্তার, আনিকা জান্নাত, শাওন মিয়া, তাসনীম তাজ, মো. ইসমাইলসহ উপস্থিত সবাই বন্ধুসভা থেকে নিজেদের প্রাপ্তির কথা ও স্বেচ্ছাসেবী কাজের দারুণ সব অনুভূতি শেয়ার করেন। তাঁরা জানান, স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আছেন বলে সমাজের অনেকে তাঁদের ভালো চোখে দেখেন ও সব কাজে বিশ্বাস করেন। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজের এলাকার অনেক ভালোবাসা ও সম্মান পেয়ে থাকেন।
সাংস্কৃতিক সম্পাদক মারফুয়া সিয়াম বলেন, ‘বন্ধুসভায় কাজ করার সুবাদে এখন পারিবারিক কোনো আয়োজনেও সবাই আমার কাধেঁ দায়িত্ব দিতে ভরসা পায়। গ্রামের সবাই আমার কাজ পছন্দ করে।’
উপস্থিত ছিলেন তিনজন নতুন বন্ধু। তাঁরাও নিজেদের স্বেচ্ছাসেবী কাজের কথা বলেন। মেহজাবিন খুশবু বলেন, ‘কয়েক দিন থেকে বন্ধুসভায় আসছি, দারুণ লাগছে। বন্ধুসভার কাজগুলো অনেক ভালো লাগে। বন্ধুসভার বন্ধু হিসেবে যুক্ত থেকে মানুষের জন্য দারুণ কিছু করতে চাই।’
বন্ধু আশা আক্তার, আরিফুজ্জামান সেলিম ও রাহুল সরকার বলেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। বন্ধুসভার ভালো কাজ উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জোগায়।’
সভাপতি বাবুল ইসলাম আসন্ন কর্মসূচি ও নতুন কমিটি গঠন নিয়ে বিশেষ আলোচনা করেন।
সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আমি এখন একটি ভালো কাজ করে এসেছি। আমরা কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক মিলে একটি বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছিলাম। এমন ভালো কাজ সব সময় চালিয়ে যেতে চাই। বন্ধুরাও সবাই দৈনিক অন্তত একটি ভালো কাজ হলেও করবেন।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি জহির ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ছামিউল ইসলাম, বন্ধু তালিমুল ইসলাম, তাসনীম তাজ, তামিম মল্লিক, মো. ইসমাইল, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।