সময়টা ঠিক সন্ধ্যা। প্রথম আলো ভৈরব অফিসে একদল তরুণ-তরুণীর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘আমার পরান যাহা চায়, তুমি তাই, তুমি তাই গো...’। গানটি মাধ্যমে ৮ মে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে ভৈরব বন্ধুসভার বিশেষ আয়োজন গান কথা কবিতায় রবীন্দ্র স্মরণের সূচনা হয়।
সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসাইন আয়োজনটির সঞ্চালক ছিলেন। প্রকৃতির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ছিল গভীর সখ্য। সেটি প্রকাশ পায় তাঁর গান ও কবিতায়। কথাগুলো বলছিলেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক আরতি পাল। তিনি গেয়ে শোনান, ‘তোমার খোলা হাওয়া’ ও ‘সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে’ গান দুটি। বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের কাছেও রবীন্দ্রসংগীত এখনো বেশ জনপ্রিয়। প্রতিটি গান যেন জীবনের সঙ্গে মিলে যায়।
মোশারফ রাব্বি শোনান, ‘তোমায় গান শোনাব’ ও ‘আমার পরান যাহা চায়’ গান দুটি।
‘কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না।
(মোহমেঘে তোমারে...
অন্ধ করে রাখে, তোমারে দেখিতে দেয় না।)
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না।’
স্রষ্টাকে দেখা ও পাওয়ার আকুতি নিয়ে লেখা রবীন্দ্রনাথের গানটি গেয়ে শোনান পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শাহরিয়ার ইবাদ। জান্নাতুল প্রীতি শোনান ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’ গানটি।
গান ও কবিতার ফাঁকে চলে রবীন্দ্র আলোচনা। আলোচনায় যুক্ত হন দপ্তর সম্পাদক আনাস, সহসাংগঠনিক সম্পাদক এরফান হোসেন, বন্ধু সাদাব ও রূপা। উপদেষ্টা আসাদুজ্জামান সোহেল বলেন, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যগুলো বাংলা সাহিত্যকে পরিচয় করিয়েছে বিশ্বব্যাপী। ভৈরব বন্ধুসভা রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করে পাঠচক্রে ও সাহিত্যের নানা কর্মকাণ্ডে।
জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক তানশি নাহার বলেন, ‘ভৈরব বন্ধুসভার পাঠের আসরে রবীন্দ্রনাথের বইগুলো আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবারই নতুন কিছু শিখছি। ছোটগল্প আগ্রহের জায়গা তৈরি করে। ‘একরাত্রি’, ‘দেনাপাওনা’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘হৈমন্তী’, ‘অপরাজিতা’ গল্পগুলো নিয়ে পাঠচক্র হয়েছে। ‘একরাত্রি’ নিয়ে নাটক মঞ্চায়িত হবে দুবার।’
ম্যাগাজিন সম্পাদক রাহিম আহমেদ বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, ষড়ঋতুর বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ঋতু বর্ষা। কারণ, তাঁর লেখনী, গান ও কবিতায় বর্ষার দাপট লক্ষণীয়। সহসভাপতি সানজিদা সিদ্দিকার কণ্ঠে বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি গানে তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।’
গানের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলো সাহিত্যপ্রেমীদের হৃদয়ে আলাদা জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। উপদেষ্টা সুমাইয়া হামিদ আবৃত্তি করেন ‘শেষ চিঠি’ ও প্রচার সম্পাদক মেধা আবৃত্তি করেন ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতা।
সভাপতি নাহিদ হোসাইন বলেন, ‘সাহিত্যের সব শাখায় ছিল রবীন্দ্রনাথের বিচরণ। শত বছর আগে রচিত গান–কবিতা ও গল্পগুলো আজও হৃদয়ে দাগ কাটে। ভৈরব বন্ধুসভা বেশ কয়েক বছর ধরে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে আসছে পাঠচক্র, সাহিত্য আলোচনা, নাটিকাসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে। আজকের আয়োজনটি ছিল ধারাবাহিকতার একটি অংশ, এটি চলমান থাকবে।’
কার্যনির্বাহী সদস্য প্রিয়াংকা বলেন, ‘ছোটবেলায় “আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে” কবিতায় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয়। এখন ভৈরব বন্ধুসভার পাঠচক্র ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা আয়োজনে প্রতিনিয়ত নতুন বিষয় সম্পর্কে জানছি। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি গানে আমাদের বন্ধুরা নৃত্য পরিবেশনও করেছেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্মগুলো বেঁচে থাকবে যুগ যুগ ধরে।’ সবশেষে,
‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।
মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়-’
গানটি গেয়ে শোনান মোশারফ রাব্বি, সঙ্গে যোগ দেন সমবেত সব বন্ধু। এর মাধ্যমেই সমাপ্তি হয় রবীন্দ্র স্মরণ আয়োজনের।