সমরেশ মজুমদার রচিত ‘গর্ভধারিণী’ নামটি শুনে প্রথমে মনে হবে, কোনো এক মায়ের সংগ্রামের কাহিনি। কিন্তু বইটি পড়ে ধারণা বদলে যায়। এটি একটি বিপ্লবের কাহিনি। এটি শুধু রাজনৈতিক উপন্যাস নয়, এটি একটি প্রজন্মের কথা, যারা পরিবর্তনের দাবিতে নিজের জীবন বাজি রেখেছে।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চারটি চরিত্র জয়ীতা, সুদীপ, আনন্দ ও কল্যাণ। ভিন্ন পারিবারিক ও পরিবেশ থেকে উঠে এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে এক জায়গায় মিলিত হয়। সেখানে শুধু বন্ধু নয়, জন্ম নেয় এক নতুন চেতনার, নতুন স্বপ্নের। যারা চায় না রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যানারে লড়াই করতে। তারা নিজেরাই হয়ে ওঠে কর্মী, বিচারক ও বিপ্লবী। সমাজের ওপর চাপিয়ে দেওয়া মূল্যবোধ আর শোষণের বিরুদ্ধে তারা রুখে দাড়ায়। সিস্টেমের ভূত তাড়ানো সহজ নয়। চার বন্ধু এই সহজ সত্যিটা বুঝতে পেরে চেয়েছিল একটা আঘাত হানতে। শুধু চাওয়ায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, পরপর তিনটি অপারেশন করে কলকাতার বুকে ঝড় তুলে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে অন্যত্র পাড়ি জমায়।
প্যারাডাইস কিংবা ভুয়া ওষুধ কারখানা ধ্বংস করা যেন একেকটা ছোট বিদ্রোহ। তবে এসবের পেছনে ছিল সৎ উদ্দেশ্য ও সাহস। উপন্যাস শুধু শহরের বিদ্রোহে আটকে থাকে না, নতুন রূপ নেয় যখন মূল চরিত্র চার তরুণ–তরুণী পালিয়ে আশ্রয় নেয় এক প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম তোপল্যাং-এ। রোগ, দারিদ্র্য, নিঃসঙ্গ ও কুসংস্কারে থাকা মানুষের মধ্যে চরিত্রেরা হয়ে ওঠে আলোর দিশারি। সুদীপের সংগ্রামী চেতনা, জয়ীতার নেতৃত্ব, কল্যাণের আত্মত্যাগ ও আনন্দের শান্ত বুদ্ধিদীপ্ত ভাবনা নিয়ে গড়ে ওঠে একটা ক্ষুদ্র দল, যারা সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করতে চায়। ‘গর্ভধারিণী’র সবচেয়ে বড় শক্তি বাস্তবতা। যেখানে চারজনই ভুল করে, আঘাত পায়, হারায়। কেউ নিখুঁত নয়। তবু তারা দাঁড়িয়ে থাকে—বুকের ভেতর একটা স্বপ্ন জ্বালানো থাকে।
১৮ এপ্রিল বিকেলে সমরেশ মজুমদারের ‘গর্ভধারিণী’ উপন্যাস নিয়ে পাঠের আসর করেছে সিলেট বন্ধুসভা। প্রথম আলো সিলেট অফিসের বন্ধুসভার কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
বই পর্যালোচনায় বন্ধু ফয়সাল আহমেদ বলেন, কল্যাণের মধ্যে যে মধ্যবিত্তের প্রভাব দেখা দেয়, তা সমাজের প্রতিটি মধ্যবিত্তের মধ্যে বিদ্যমান। অস্বীকার করার কোনো কারণই নেই। কবি একটা সুন্দর ব্যাপার তুলে ধরেন, মধ্যবিত্তরা কোনো কিছু করবে বলে ঠিক করলে, সেটা না করে শান্ত হয় না। সত্যিই তা–ই।
বন্ধু মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সমাজকে বদলাতে তারা যে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
এ ছাড়া বইটি পাঠ করেন বন্ধু সুমন দাস, প্রত্যাশা তালুকদার ও প্রণব চৌধুরী। পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু দেব রায় সৌমেন, ফয়সাল আহমেদ, কিশোর দাশ, কৃত্য ছত্রী, প্রীতম তালুকদারসহ অন্য বন্ধুরা।
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা