ফরিদপুরে প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগে মানববন্ধন

কর্মসূচিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি, ব্যক্তিরা অংশ নিয়ে দাবির প্রতি একাত্ম প্রকাশ করে বক্তব্য দেন
ছবি: বন্ধুসভা

প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগে ফরিদপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ৩১ মার্চ বেলা তিনটায় ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি, ব্যক্তিরা অংশ নিয়ে দাবির প্রতি একাত্ম প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা বাতিল ও নিঃশর্ত মুক্তি, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ও গবেষক বিপ্লব বালা বলেন, ‘আজকাল তুমি কোন দলের পক্ষে না বিপক্ষে এভাবে মানুষকে বিচার করা হয়। পক্ষ-বিপক্ষের বাইরে সাধারণ মানুষ থাকেন, তাঁরাই নির্বাচনে জয়ের ভূমিকা রাখেন। ব্রিটিশ আমলে রাষ্ট্রের প্রেস রিলিজ কেউ বিশ্বাস করত না, এখনো করে না।’

প্রথম আলোর সেদিনের ছবি ও বক্তব্য আলাদা হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ওই কথা মানুষ পথে, ঘাটে, মাঠে বলে থাকেন। আসলে মনে হয়, সরকার ভয় পেয়ে গেছে। ভয় পায় যারা, তারা ভয় দেখায়, তাই তারা ভয় দেখাচ্ছে।

ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি ক্রোধ নিয়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে। সরকারকে অনুরোধ করছি, এ ক্রোধ ও সংক্ষুব্ধতা পড়ার জন্য। আপনারা আমাদের এ ক্রোধ ও সংক্ষুব্ধতার মূল্য দিয়ে এই তিন দফা দাবি মেনে নিন।’

ফরিদপুর মহিলা পরিষদের সভাপতি শিপ্রা রায় বলেন, ‘শামসের বড় ভাই দেশের জন্য জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। তাঁর মায়ের আকুতি আমি দেখেছি। তিনি বলেছেন “আমার ছেলের অপরাধ কী? আমার ছেলে তো চোর না, ডাকাত না যে তাকে রাতের আঁধারে এভাবে তুলে নিয়ে যেতে হবে।”’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এ দেশে খুনের আসামি, ডাকাতির আসামি গ্রেপ্তার হয় না। সেখানে সাংবাদিক শামসকে মামলা হওয়ার আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসানউজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কর্মস্থল থেকে বারবার রাস্তায় দাঁড়াতে হয় এ নিবর্তনমূলক আইনটির জন্য। সরকার আজকাল যেভাবে কথা বলছে, এতে মনে হচ্ছে, সরকার এ আইনের জনসমর্থন চায়। আমরা কলম ছেড়ে বারবার রাস্তায় নামতে চাই না। এ আইনের বাতিল চাই এবং এ আইনে গ্রেপ্তার হওয়া সব সাংবাদিকের মুক্তি চাই।’

ফরিদপুরে প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগে মানববন্ধন
ছবি: বন্ধুসভা

ফরিদপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দাবি ছিল কথা বলার অধিকার। সেই অধিকার এখন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে কথা বলার সুযোগ দিয়ে এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতার ফল ভোগ করতে দিন।’

জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আবরাব নাদিম বলেন, বলা হয়েছিল, এই আইন সাংবাদিকদের ওপর প্রয়োগ করা হবে না। কিন্তু সরকার সে কথা রাখেনি। স্বাধীনতা মানে হচ্ছে কথা বলা। কথা হরণ করা স্বাধীনতা নয়।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ফরিদপুর মুসলিম মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ সামাদ, ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন, ফরিদপুর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সিরাজ এ কবীর, সাংবাদিক ও গবেষক মফিজ ইমাম, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সহসভাপতি মঞ্জুয়ারা স্বপ্না, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সহসাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, বাংলার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পথকলির নির্বাহী পরিচালক বেলায়েত হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিকুজ্জামান, সমকাল সুহৃদ সমাবেশ ফরিদপুরের সাধারণ সম্পাদক কাজী সবুজ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা করব জয়’–এর সাধারণ সম্পাদক শরিফ খান।

এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর সনাকের সাবেক সভাপতি রমেন্দ্রনাথ রায় কর্মকার, ফরিদপুর মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হোসনে আরা খানম, ফরিদপুর হরিজন সম্প্রদায়ের সভাপতি শ্যামল বিশ্বাস, ফরিদপুর সংবাদপত্র হকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ। বন্ধুসভার বন্ধুদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি মানিক কুন্ডু, বন্ধু জাহিদুজ্জামান খান, রফিকুল ইসলাম, আবদুস সবুর মোল্লা, তাওহিদুজ্জামান খান, বাঁধন পাল, সজীব দত্ত, শ্যামল মণ্ডল।

উপস্থাপনা করেন ফরিদপুর প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক প্রবীর কান্তি বালা। কর্মসূচি শেষে আগত ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন ফরিদপুর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক জহির হোসেন।

সাধারণ সম্পাদক, ফরিদপুর বন্ধুসভা