দীর্ঘ ৫ বছরের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে। এই হিম মোড়ানো, কুয়াশাঝরা প্রকৃতির মোহনীয় রূপে আরও মোহনীয় সময় নিয়ে আসছে ষষ্ঠ জাতীয় বন্ধু সমাবেশ ২০২৫। বিগত ৫টি বন্ধু সমাবেশ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরের স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মাঠে ২৫-২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বন্ধুত্বের এই মহামিলনমেলা।
সারা দেশের দুই হাজার বন্ধুর পদচারণ আর উচ্ছ্বাসে মুখর হবে স্কাউট মাঠ। গাছগাছালির ছায়াঘেরা, পাখির কূজন আর শীতের আবহে মোড়া তাঁবুবাসের এক অনন্য অভিজ্ঞতার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন বন্ধুরা।
এই সমাবেশ নিজেকে জানার, ভাঙার আর গড়ার এক মোক্ষম সুযোগ। নিজের শক্তি, আত্মবিশ্বাস আর আত্মোপলব্ধির এক অনন্য আয়োজন। দেশপ্রেম, স্বেচ্ছাসেবা, আত্মোন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি, গুণীজনদের সান্নিধ্য, নির্মল বিনোদন আর পারস্পরিক মিথস্ত্রিয়ার অনন্য এই আয়োজনে বন্ধুদের জানাই আমন্ত্রণ। জাতীয় সমাবেশে অংশগ্রহণের আগেই জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত নিয়ম, শৃঙ্খলাবিধি আর আয়োজনের খুঁটিনাটি।
নিবন্ধন-সংক্রান্ত
· প্রতিটি বন্ধুসভা থেকে চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্টসংখ্যক বন্ধু অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
· কোন বন্ধুসভা থেকে কতজন যোগ দিতে পারবেন, এরই মধ্যে সব বন্ধুসভাকে সংখ্যা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্ধুসভার উপদেষ্টাদেরও নিবন্ধন করে নির্দিষ্ট সংখ্যার আওতায় আসতে হবে।
· জাতীয় পর্ষদ–নির্ধারিত সংখ্যার অতিরিক্ত কেউ অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। বন্ধুদের সঙ্গে কোনো অভিভাবক বা সঙ্গী এলে তিনি সমাবেশস্থলে থাকা, খাওয়া ও উপহার গ্রহণের সুযোগ পাবেন না।
· প্রতিটি বন্ধুসভার সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক কিংবা তাঁদের মনোনীত বন্ধু তাঁর বন্ধুসভার সব অংশগ্রহণকারীর তথ্য সংগ্রহ করে একসঙ্গে নির্দিষ্ট লিংকে নিবন্ধন সম্পন্ন করবে।
· জনপ্রতি নিবন্ধন ফি ৩০০ টাকা। প্রতিটি বন্ধুসভার দায়িত্বশীল সদস্য সবার ফি সংগ্রহ করে একসঙ্গে বন্ধুসভার নির্ধারিত বিকাশ অ্যাকাউন্টে (মেক পেমেন্ট) পাঠাবেন।
· নিবন্ধন ফি দিয়ে তথ্য পূরণ না করলে অংশগ্রহণ করা যাবে না।
· সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য ২০২৬ সালের কমিটির খসড়া জাতীয় পর্ষদের কাছে পাঠাতে হবে। ২০২৬ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবশ্যই নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে।
· এ বছর বর্তমান কমিটি বা বন্ধুসভার সদস্যের বাইরে অ্যালামনাইরাও নিবন্ধন করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে অ্যালামনাইদের জন্য নির্ধারিত আলাদা ফরমে ১ হাজার ৫০০ টাকা নিবন্ধন ফি দিয়ে আসতে হবে। নিবন্ধিত অ্যালামনাইরাও নিয়মিত বন্ধুদের অনুরূপ ব্যবস্থাপনা ও সুযোগ–সুবিধা পাবেন।
· গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিটি বন্ধুসভার বন্ধুদের মাসিক চাঁদা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সমাবেশে যাঁরা যোগ দেবেন, প্রত্যেককে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নির্ধারিত চাঁদা নিজ বন্ধুসভার অর্থসম্পাদকের কাছে পরিশোধ করতে হবে।
যাতায়াত ও পরিবহন-সংক্রান্ত
নিবন্ধিত বন্ধুদের নিজ খরচে নির্ধারিত সময়ে সমাবেশস্থলে আসতে হবে। যাতায়াতের জন্য কেন্দ্র থেকে কোনো খরচ প্রদান করা হবে না। যাত্রাপথে নিজেদের সব ধরনের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে। দুই রাত তাঁবুতে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। যাতায়াতের আগে কোন পথে এলে ভালো হবে, সেটি জেনে নিতে হবে।
আবাসন-সংক্রান্ত
· পুরুষ ও নারী বন্ধুদের জন্য আলাদা দুটি তাঁবু জোন থাকবে। সবাইকেই তাঁবুতে থাকতে হবে।
· প্রতিটি তাঁবুতে কমবেশি ১০ জন বন্ধুকে একসঙ্গে থাকতে হবে। একই তাঁবুতে একাধিক বন্ধুসভার বন্ধুদের থাকতে হতে পারে। কোন তাঁবুতে কে থাকবে তা জাতীয় পর্ষদ নির্ধারণ করে দেবে।
· আবাসন জোনে অন্যের সমস্যা হয়, এমন কোনো কার্যক্রম করা যাবে না। নারীদের তাঁবু জোনে কোনো পুরুষ এবং পুরুষদের তাঁবু জোনে কোনো নারী বন্ধু প্রবেশ করতে পারবেন না।
· তাঁবুতে বিদ্যুতের সংযোগসহ একটি লাইট ও সকেট থাকবে। যেকোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। বিদ্যুতের শর্টসার্কিট কিংবা শক থেকে সাবধান থাকতে হবে।
· প্রতিটি তাঁবুতে খড়ের ওপর ম্যাট বিছানো থাকবে। কেউ যদি তোশক বা বিছানা নিয়ে আসতে চান, তা নিজ দায়িত্বে আনা যাবে।
· তাঁবুতে থাকার জন্য প্রয়াজনীয় উপকরণ (বালিশ, চাদর, মশারি, কাঁথা বা কম্বল) নিজ দায়িত্বে নিয়ে আসতে হবে। নিজের সব মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে।
· নিয়মিত ওষুধ, প্রসাধনসামগ্রী (সাবান, শ্যাম্পু, ব্রাশ, টুথপেস্ট, টিস্যু) নিজ দায়িত্বে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি তাঁবু জোনে আলাদা স্থানে টয়লেট ও গোসলখানা স্থাপন করা হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।
· মূল স্টেজে অনুষ্ঠান চলাকালে তাঁবুতে অবস্থান করা যাবে না। প্রতি রাতে নির্ধারিত কার্যসূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণার পর স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তাঁবুতে ফিরতে হবে এবং ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে হবে।
· বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। অপ্রয়োজনে পানি নষ্ট করা যাবে না।
· তাঁবুতে কোনো অবস্থাতেই কয়েল বা আগুন জ্বালানো যাবে না।
· সমাবেশস্থলে পুরো সময় অবস্থানের মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত কেউ সমাবেশস্থলের বাইরে যেতে পারবেন না। বাইরে যেতে হলে গেটে থাকা স্বেচ্ছাসেবক ও নিরাপত্তাকর্মীকে অবহিত করে, নির্ধারিত খাতায় নাম, বন্ধুসভার নাম, মোবাইল নম্বর, বের হওয়ার সময় ও আবার প্রবেশের সময় উল্লেখ করতে হবে।
· সমাবেশস্থলে ধূমপান নিষিদ্ধ।
খাবার-সংক্রান্ত
· সমাবেশস্থলে খাবারের জন্য আলাদা জোন থাকবে। সবার জন্য ২৫ ডিসেম্বর রাত, ২৬ ডিসেম্বর সকাল, দুপুর ও রাত এবং ২৭ ডিসেম্বর সকালে খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। নির্ধারিত সময়ে প্রতি বেলার কুপন জমা দিয়ে, সুশৃঙ্খলভাবে খাবার গ্রহণ করতে হবে। কুপন ছাড়া খাবার নেওয়ার সুযোগ নেই। নির্দিষ্টসংখ্যক আসন পূর্ণ হয়ে গেলে পরবর্তী ব্যাচের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
· নির্ধারিত সময়ের পর খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। খাবার অপচয় বা নষ্ট করা যাবে না।
· লভ্যতা সাপেক্ষে হালকা স্ন্যাকসের ব্যবস্থা থাকবে। নির্ধারিত স্টলে হ্রাসকৃত মূল্যে চা ও নাশতা কিনে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
প্রতিযোগিতা–সংক্রান্ত
· সমাবেশে দেয়ালিকা, বই পড়া, খেলাধুলা, কুইজ, যেমন খুশি তেমন সাজোসহ নানা ধরনের প্রতিযোগিতা থাকবে। সব বন্ধুসভার আনা দেয়ালিকা মূল্যায়ন করে, সেরা বাছাই করা হবে। দেয়ালিকার বিষয় হবে ‘আমরা সবাই বাংলাদেশ’।
· অনুষ্ঠানে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতায় অরুচিকর ও বিতর্কিত ব্যক্তি ছাড়া বিশিষ্টজনের আদলে সাজ করা যাবে।
· তাঁবুভিত্তিক বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পাঠচক্র প্রতিযোগিতা থাকতে পারে।
· সমাবেশের বিভিন্ন আয়োজন নিয়ে তাৎক্ষণিক রিল কিংবা ভিডিও চিত্র (সর্বোচ্চ ১ মিনিটের) করা যেতে পারে। বন্ধুসভার যে কেউ ভিডিও করে প্রদর্শনীর জন্য জমা দিতে পারবে। এ ছাড়া তাৎক্ষণিক যেকোনো ধরনের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে।
পুরস্কার–সংক্রান্ত
· ‘সহমর্মিতার ঈদ’, ‘বৃক্ষরোপণে সেরা দশ’, এবং ‘বর্ষসেরা দশ বন্ধুসভা’কে পুরস্কার ও সনদ প্রদান করা হবে। বেশ কিছু ব্যক্তিগত পুরস্কারও প্রদান করা হতে পারে। নির্ধারিত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হবে। সেরা ১৫টি দেয়ালিকার জন্য পুরস্কার থাকবে।
· সমাবেশস্থলে তাৎক্ষণিক যেকোনো প্রতিযোগিতারও পুরস্কার থাকতে পারে।
সাংস্কৃতিক পর্বে অংশগ্রহণ–সংক্রান্ত
· কোন বন্ধুসভা সমাবেশের মঞ্চে কী ধরনের পরিবেশনা করতে চায়, সেটি নির্ধারিত সাংস্কৃতিক কমিটির সদস্যরা আগে থেকেই জেনে নেবেন। পরিবেশনার ধরন, পরিবেশনযোগ্যতা ও সৌন্দর্য বিবেচনায় মঞ্চে পারফর্ম করার সুযোগ থাকবে। এ ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক কমিটির সদস্যদের মতামতই চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে।
· সমাবেশস্থলে পূর্বে অবগত ও অনুমোদন ব্যতীত কোনো পরিবেশনা করা যাবে না। শুধু বাংলা ভাষার গান কিংবা গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করা যাবে। ক্ষুদ্র নাটিকা (৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের) করা যেতে পারে।
· নিজ অঞ্চলের পরিবেশনা কিংবা ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পরিবেশনা (যেমন ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, গম্ভীরা, পুঁথিপাঠ), আদিবাসী পরিবেশনা অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
স্বেচ্ছাসেবক–সংক্রান্ত
· কেউ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে চাইলে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে নাম পাঠাতে হবে। অবশ্যই বন্ধুসভার সক্রিয় সদস্য হতে হবে। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বাছাই সাপেক্ষে যেকোনো দায়িত্ব পালনের মানসিকতা থাকতে হবে। স্বেচ্ছাসেবকেরা আলাদা সনদ পাবেন।
অন্যান্য
সমাবেশস্থলে গঠনতন্ত্রে বর্ণিত সব আচরণ মেনে চলতে হবে। নারী-পুরুষ কারও সঙ্গেই অসদাচরণ করা যাবে না। অসদাচরণের প্রমাণ পেলে
অভিযুক্ত অংশগ্রহণকারীকে তাৎক্ষণিক সমাবেশস্থল থেকে বহিষ্কার করা হবে। সবাইকে জেন্ডার সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। যেকোনো সমস্যার প্রতিকার বা সমাধানের জন্য নির্ধারিত দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। নিজেরা কোনো ধরনের বিবাদ বা পারস্পরিক দ্বৈরথে যুক্ত হওয়া যাবে না।
বিনা অনুমতিতে অন্য কারও সামগ্রী ব্যবহার করা যাবে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিশিয়ালস ব্যতীত অন্য কোনো অংশগ্রহণকারী অনুমতি ছাড়া কারও ছবি বা ভিডিও করতে পারবে না।
আশা করি, বন্ধুরা এখন আর কোনো দোটানায় নেই। এবার শুধু ব্যাগ গোছানোর পালা। দ্রুত প্রস্তুতি নিন, সময়মতো চলে আসুন। আর অর্জন করুন জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা।