ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার সহায়তায় শ্রমিক থেকে উদ্যোক্তা হলেন তিন নারী

কর্মসংস্থানের জন্য এই নারীর বাসায় পাপোশ বানানোর মেশিন সেট করে দেন ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার জিয়াবাড়ি দক্ষিণ দুয়ারির নারী তাহেরা খাতুন (৩৪)। পাপোশ তৈরির কারখানায় কাজ করেন। তাঁর স্বামীও একই কারখানায় কাজ করেন। যা মজুরি পান, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে।

২০ অক্টোবর ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার উদ্যোগে দিনব্যাপী নারী উদ্যোক্তা তৈরি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন তিনিসহ আরও অনেক নারী। কর্মশালায় পাপোশ বানানো, নকশিকাঁথা বানানো, কাগজের ফুল তৈরি, পুঁতির মালা তৈরি, নারকেলের আঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির সম্পর্কে ধারণা দেওয়া এবং হাতে–কলমে কাজ শেখানো হয়। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে কীভাবে উৎপাদিত পণ্য বাইরের বাজারে বিক্রি করবে, কীভাবে ক্রেতা সঞ্চার করবে ইত্যাদি সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়।

ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার সহায়তায় উদ্যোক্তা হলেন এই নারী
ছবি: বন্ধুসভা

কর্মশালায় সফল কিছু নারী উদ্যোক্তাদের গল্প বলা হয়। তখন তাহেরা খাতুন শ্রমিক থেকে উদ্যোক্তা হবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু উদ্যোক্তা হতে হলে যে মূলধন প্রয়োজন, তা তাঁর কাছে নেই। এ রকম আরও কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে ২২ অক্টোবর ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার বন্ধুরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য নেন এবং সহায়তার আশ্বাস দেন। পরবর্তী সময় ২৪ অক্টোবর সকালে তাহেরা খাতুনের বাসায় পাপোশ বানানোর মেশিন সেট করে দেন বন্ধুরা। এ ছাড়া কাঁচামাল, সুতা ইত্যাদি প্রদান করা হয়। একইভাবে বিজলী আক্তার ও ফাহিমা আক্তার নামের আরও দুই নারীর পরিবারেও মেশিন সেট করে দেয় ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা।

মেশিন সেট করার পরপরই তাঁরা পাপোশ বানানো শুরু করেন। ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার পক্ষ থেকে মেশিন, কাঁচামাল, সুতা প্রদান ছাড়াও বাজারজাতকরণে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে দেওয়া হয়।

তাহেরা খাতুন বলেন, ‘এলা (এখন) থেকে মুই ও মোর স্বামীক মাইনসের বাসায় কাম (কাজ) করতে হবে না। নিজের একটা ব্যবসা থাকিলে আরামে চলিবা পারিমো।’

বিজলী আক্তার বলেন, ‘অনেক বড় কোম্পানি হামার কারখানা থেকে দামি জিনিস কমদামে বানায় লে যায়। মুই ওই কাজগুলা করিবা পারু। চট দিয়ে দারুণ যে পাপোশ বানানো যায়, ওই কাজও পারু। এলা নিজের মেশিনে ওইসব কাজ করে একটু ভালো দাম নেওয়া যাবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মোত্তালেব সম্রাট বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বেশ কিছু পাপোশ তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এখানে অনেক নারী কাজ করেন। নারীরা যদি বাসায় নিজে নিজে কাজ করেন, তাহলে তাঁরাও আলাদাভাবে উদ্যোক্তা হবেন এবং সমাজ এগিয়ে যাবে।’

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘একটা মেশিন দিয়ে শিফট করে দুই থেকে তিনজন কাজ করা যায়। যে পরিবারগুলোকে সহায়তা করা হয়েছে, তারা সফল উদ্যোক্তা হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার সহায়তায় উদ্যোক্তা হলেন এই নারী
ছবি: বন্ধুসভা

স্থানীয় ব্যবসায়ী কফিজুল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধুসভার এই কাজ আসলেই প্রশংসনীয়। তারা যেভাবে সহায়তা করছে, তাতে নারী উদ্যোক্তা তৈরি হলে আমাদের লাভ। কারণ, ঢাকাসহ বাইরে যে পরিমাণ পাপোশের চাহিদা, আমরা তা উৎপাদন করতে পারি না। ঘরে ঘরে যত উদ্যোক্তা হবে, তত আমরা জোগান দিতে পারব।’

বন্ধুরা বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় পর্ষদের নির্দেশনার আলোকে তিনটি পরিবারকে সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। এই এলাকার নারীদের আগ্রহ ও সক্রিয়তা বেশ লক্ষণীয়। আমরা তাঁদের নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করছি।’

উল্লেখ্য, তিনটি পরিবার থেকে দৈনিক গড়ে ২৫ ও ৩২ ইঞ্চির ২০০ পিস পাপোশ উৎপাদন হবে। এ ছাড়া একটি মেশিন থেকে দিনে শিফট অনুযায়ী দুই থেকে তিনজন কাজ করতে পারবেন বিধায় উপকারভোগীরা যদি অন্য কেউ উদ্যোক্তা হতে চান, তাহলে তাঁদেরও মেশিনটি ব্যবহার করতে দিতে পারবেন। উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা হয়েছে যে যদি কেউ উদ্যোক্তা হতে চান, তাঁরা যেন সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।

সাধারণ সম্পাদক, ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভা