রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পরিচিত মুখ, একসময়ের দাপুটে সাংবাদিক অমল সরকার (৬৭)। সাংসারিক টানাপোড়েন আর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি হয়ে পড়েছেন বেকার। নিজের সামান্য ভিটাটুকু পর্যন্ত হারিয়েছেন। জীর্ণ শরীর নিয়ে সংসারের চাহিদা পূরণ করতে অন্যের সহযোগিতায় নতুন করে শুরু করেছেন চায়ের দোকান। পুঁজি না থাকায় তা–ও করতে পারছেন না তিনি।
এমন পরিস্থিতি দেখে অমল সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে গোয়ালন্দ বন্ধুসভা। ২৫ অক্টোবর তাঁর চাহিদামতো দোকানে প্রয়োজনীয় সব উপকরণের ব্যবস্থা করে দেয়। অন্তত দিন শেষে কিছুটা হলেও অভাব ঘুচবে। বন্ধুসভার এমন আয়োজনে তিনি খুশি। তবে তাঁর শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। অমল সরকার নিজের চিকিৎসা আর মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে ঘরের ব্যবস্থার আবেদন করেছেন সবার কাছে।
অমল সরকার গোয়ালন্দ পৌরসভার বিজয় বাবুর পাড়ার (কলেজপাড়া) প্রয়াত যোগেন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে। স্ত্রী দীপা সরকার, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছয় বছর আগে মেয়েকে অনার্স পড়া অবস্থায় বিয়ে দেন। বড় ছেলে সজীব সরকার জেলার বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজ থেকে এ বছর মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেছে। ছোট ছেলে সমির সরকার বালিয়াকান্দি মডেল হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
খবরের কাগজের প্রতি ছোটবেলা থেকে ছিল বাড়তি ঝোঁক। ১৯৮৫ সালে ইত্তেফাকে বিজ্ঞাপন দেখে টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘বিদ্রোহ কণ্ঠ’ পত্রিকায় গোয়ালন্দ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পেনসিল, নতুন বাংলা, দৈনিক দেশ বাংলা ও সর্বশেষ ভোরের কাগজ পত্রিকা প্রকাশের শুরু থেকে গোয়ালন্দ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। দীর্ঘদিন এই পেশায় থাকলেও পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হয়, অসহায় হয়ে পড়েন তিনি।
লেখালেখির পাশাপাশি গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনে চায়ের দোকান দেন অমল। অসুস্থতা ও অভাবের কারণে ছেলে–মেয়ের পড়াশোনা ও প্রতিদিনের সংসার খরচ জোগাতে শেষ পর্যন্ত নিজের সামান্য ভিটাটুকু বিক্রি করে দেন। ২০০৬ সালে লেখালেখি ছেড়ে জীবিকার তাগিদে বালিয়াকান্দিতে হোটেল ব্যবসা শুরু করেন। রোগ–শোকে ভুগতে থাকায় তা–ও বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর গত জুলাই মাসে ফিরে আসেন গোয়ালন্দের আপন ঠিকানায়; কিন্তু বসতবাড়ি না থাকায় পরিচিত একজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। বর্তমানে এক চোখে ভালো দেখতে পারেন না। সম্প্রতি গোয়ালন্দ বাজারের একপাশে সাবেক সহকর্মীদের সহযোগিতায় ৫০০ টাকায় ভাড়ায় ছোট্ট খুপরি দোকানে চা বিক্রি করছেন; কিন্তু অর্থ ও আনুষাঙ্গিক উপকরণ না থাকায় তা–ও করতে পারছেন না।
প্রথম আলোর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বন্ধুসভার ভালো কাজের অংশ হিসেবে ২৫ অক্টোবর তাঁর চায়ের দোকানের জন্য টেবিল, বেঞ্চ, চেয়ারসহ পান-সুপারি, চিনি ও চা–পাতা, বিস্কুট, কলাসহ আনুষাঙ্গিক উপকরণ কিনে দেন গোয়ালন্দ বন্ধুসভার বন্ধুরা।
বন্ধুসভার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে অমল সরকার বলেন, ‘প্রথম আলো ও বন্ধুসভা সব সময় ভালো কাজ করে থাকে। তারা আমার দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানোয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, স্থানীয় প্রতিনিধিসহ বন্ধুসভার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান তিনি।
এ সময় গোয়ালন্দ রাবেয়া ইদ্রিস মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল কাদের শেখ, প্রথম আলো প্রতিনিধি এম রাশেদুল হক, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গোয়ালন্দ উপজেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ বাবর আলী, বন্ধুসভার সভাপতি জীবন চক্রবর্তী, সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সহসভাপতি শামসুল হক, রফিকুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সফিক মণ্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজা বিশ্বাস, দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ন আহম্মেদ ও বন্ধু রেজাউল মুন্সী উপস্থিত ছিলেন।