বন্ধুর বই অনুষ্ঠান লেখক-পাঠকের মেলবন্ধন তৈরি করেছে

বইমেলা থেকে বন্ধুর বই লাইভের ২২তম ও সমাপনী পর্বে লেখক বন্ধু হিসেবে যুক্ত ছিলেন বন্ধুসভার পৃষ্ঠপোষক আনিসুল হকছবি: বন্ধুসভা

পৃথিবীতে অনেক পেশা আছে। সেগুলো করার পাশাপাশি কিংবা বাদ দিয়ে মানুষ যে এখনো লেখালেখি করে, লেখক হয় ও বই বের করে—এটা একটা ভালো দিক। এই যে আমরা অবসর সময়ে লিখি, বই পড়ি, বই বের করি ও বইমেলায় আসি—এর চেয়ে সুন্দর ঘটনা আর কী হতে পারে!

লেখালেখি ও লেখক বন্ধুদের উৎসাহিত করতে বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে অমর একুশে বইমেলা থেকে ‘বন্ধুর বই’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এভাবেই বই নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। এবার বইমেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের অনেক বন্ধুর বই বের হয়েছে। যেখানেই যে লিখুক না কেন, লেখালেখি একটা মহৎ কর্ম উল্লেখ করে তিনি সব লেখক বন্ধুদের সাধুবাদ জানান।

‘চেষ্টা করতে করতে দেখা যাবে আমরা এমন একটা বই লিখে ফেলেছি, যেটা হয়তো এক-দুই শ বছর টিকে গেল।’
কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক

প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা প্রতিনিয়ত নানা মাধ্যমে লেখালেখি করেন। অনেকেই প্রতিবছর একাধিক বই প্রকাশ করেন। বইমেলায়ও প্রকাশিত হয় অনেকের বই। এ বছরও অমর একুশে বইমেলায় সারা দেশের অনেক বন্ধুর বই প্রকাশিত হয়েছে। এবারের বইমেলায় যেসব বন্ধুর নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদের বই সম্পর্কে আলোচনা ও প্রচারণার লক্ষ্যে বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ সম্পূর্ণ নতুন এক উদ্যোগ নিয়েছে। বইমেলা থেকে সরাসরি ‘বন্ধুর বই’ নামের বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে মেলা চলাকালে প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় এক বা একাধিক লেখক বন্ধুকে নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি বন্ধুসভার ওয়েবসাইটে মাসব্যাপী প্রতিটি বইয়ের রিভিউ ও সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

২৯ ফেব্রুয়ারি ছিল বন্ধুর বই লাইভের ২২তম ও সমাপনী পর্ব। এদিন লেখক বন্ধু হিসেবে যুক্ত ছিলেন বন্ধুসভার পৃষ্ঠপোষক আনিসুল হক। বন্ধুসভার এই আয়োজনের প্রশংসা করে নবীন লেখক বন্ধুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম বইটাও অনেক গৃহীত হয়েছে, তা কিন্তু নয়। প্রথম বইটা দিয়ে তিনি অনেক বাজিমাত করে ফেলেছেন, বিষয়টা এমন নয়। কাজেই আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে। আরও পরিশ্রম করতে হবে, পড়তে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করতে করতে দেখা যাবে আমরা এমন একটা বই লিখে ফেলেছি, যেটা হয়তো এক-দুই শ বছর টিকে গেল। কাজেই আমি বলব, এটা (লেখালেখি) কিন্তু এক শ মিটারের দৌড় নয়। এটা একটা ম্যারাথন। এক বইমেলায় সব শেষ হয়ে যাবে না। চেষ্টা আজীবনের, প্রতিদিন নিজেকে অতিক্রম করা। আর সবচেয়ে বড় কথা, পড়ো, পড়ো এবং পড়ো।’

অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্বই ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা ও দেশব্যাপী সাড়া ফেলেছে
ছবি: বন্ধুসভা

বন্ধুর বইয়ে মোট ২২টি পর্ব প্রচারিত হয়েছে। একটি পর্ব সরাসরি সিলেট বইমেলা থেকে প্রচার করা হয়। এতে অংশ নিয়েছেন ২৩ লেখক বন্ধু এবং সঞ্চালনা করেছেন ১৭ বন্ধু। প্রতিটি পর্বই ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা ও দেশব্যাপী সাড়া ফেলেছে। লেখক বন্ধু হিসেবে অংশ নিয়েছেন মনোরোগ–বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, শিশুসাহিত্যিক দন্ত্যস রওশন, আশফাকুজ্জামান, তানজিনা হোসেন, নর্মদা মিথুন, রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী, সোহানি শিফা, সাইফুল্লাহ সাদেক, রশীদ এনাম, নুরুন্নাহার ডলি, ওয়াসিমা তাসনিম, এম আর নিরব সাগর, হিমাদ্রি শর্মা, বিনিয়ামিন পিয়াস, আফনান আহমেদ রাশেদ, মিনহাজ রাফি, আতিকুর রহমান, মারজানা তাহসীন, শেখ বিবি কাউছার, ইয়াছিন আরাফাত, এম সাইমন ও সরোজ মেহেদী। সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন জাফর সাদিক, সোলায়মান কবির, সাইদুল হাসান, মাহবুব পারভেজ, রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন মল্লিক, খাইরুন্নাহার খেয়া, সজল মিত্র রিচার্ড, হাসান মাহমুদ সম্রাট, সাইমুম মৌসুমী বৃষ্টি, সাফিন উজ জামান, ওয়াসিমা তাসনিম, আশফাকুর রহমান, গিয়াসউদ্দিন মুন্না, সালমান ফারসি, রোকসানা মিতু ও অনিক সরকার।

বন্ধুসভার বন্ধুদের মধ্যে যাঁরা লেখালেখি করছেন, তাঁদের উদ্দেশে মনোরোগ–বিশেষজ্ঞ ও কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল বলেন, ‘আমরা লেখা, লিখব, চর্চা করব—তার আগে প্রচুর পড়তে হবে। পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। ছোটবেলায় পড়েছি, চোখ ও কান খোলা রেখে শিখো। যেকোনো অভিজ্ঞতা লেখক তাঁর মেধার ওপর বিশ্লেষণ করে সাহিত্যে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। সৃষ্টিশীলতাকে নতুনভাবে সমৃদ্ধ করতে পারেন।’

‘“বন্ধুর বই” উদ্যোগটির মাধ্যমে লেখক বন্ধুরা যেমন উৎসাহিত হয়েছেন, তেমনি আরও অনেক বন্ধুর মধ্যে লেখক হওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত হয়েছে।’

লেখক হতে চাইলে আগে ভালো পাঠক হতে হবে বলে মনে করেন অণুকাব্যের জনক ও শিশুসাহিত্যিক দন্ত্যস রওশন। তিনি বলেন, হুট করে কিন্তু লেখক হওয়া যায় না। এ জন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন। লিখে যেতে হবে এবং ধৈর্য ধরতে হবে।

নন্দিত এই আয়োজনের বিষয়ে জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, ‘বন্ধুসভার বন্ধুদের অসাধারণ প্রতিভার ছাপ আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে দেখতে পাই। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁদের যে অসামান্য অবদান রয়েছে, এই লাইভ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তারই ক্ষুদ্র একটি ডিজিটাল আর্কাইভ রক্ষিত হচ্ছে। এতে বন্ধুদের বইয়ের যেমন প্রচারণা হচ্ছে, তেমনি নানা ধরনের বইয়ের আলোচনা থেকে নবীন লেখক ও পাঠকদের জন্য ভাবনার খোরাক তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি এটা বলতেই হবে, বন্ধুর বই অনুষ্ঠান লেখক-পাঠকের মেলবন্ধন তৈরি করেছে।’

‘বন্ধুর বই’ জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ উল্লেখ করে সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এ বছর এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কার্যক্রমটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেসব লেখক বন্ধু আছেন, তাঁদের সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। আশা করছি এর মাধ্যমে যাঁরা লিখতে চান বা লেখার ইচ্ছে আছে—তাঁরা মনে করতে পারবেন যে আমাদের আলাদা প্লাটফর্ম আছে, যেটির মাধ্যমে নিজেদের লেখাকে সবার সামনে তুলে ধরতে পারব। পাশাপাশি আমরা বিশ্বাস করি “বন্ধুর বই” উদ্যোগটির মাধ্যমে লেখক বন্ধুরা যেমন উৎসাহিত হয়েছেন, তেমনি আরও অনেক বন্ধুর মধ্যে লেখক হওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত হয়েছে।’