আবু বক্করের বয়স সাত বছর। জীর্ণশীর্ণ একটি প্যান্ট ও টি-শার্ট পরে চেয়ারে বসে উসখুস করছিল। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, সঙ্গে কে এসেছে? বলল, একা। পাশ থেকে একজন জানাল, তার বাবা হকার। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভাঙারি মালামাল সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রি করেন। আবু বক্করের হাতে নতুন রঙিন পোশাক ও তার পরিবারের জন্য ঈদের খাদ্যসামগ্রী তুলে দিলে চেহারায় খুশির ঝলক ফুটে ওঠে। জানায়, এগুলো বাসায় নিয়ে মায়ের হাতে তুলে দেবে।
১৩ বছর বয়সী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাইফুন্নেছা এসেছিল মায়ের সঙ্গে। মায়ের হাতে খাদ্যসামগ্রী ও সাইফুন্নেছার হাতে নতুন পোশাক তুলে দেওয়া হয়। পোশাকটি কেমন, তা চোখে দেখতে না পারলেও হাত দিয়ে বারবার স্পর্শ করে সেটা বোঝার চেষ্টা করে। পরমুহূর্তেই তার মুখে ফুটে ওঠে মুচকি হাসি।
২৩ মার্চ, ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৪টা বাজতেই রাজধানীর মিরপুর কালশীর বাউনিয়াবাঁধ সি ব্লকের আরবান স্কুলের মাঠে সারিবদ্ধভাবে সাজানো চেয়ারগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সেখানে আবু বক্কর ও সাইফুন্নেছার মতো এমন দেড় শতাধিক শিশু, কিশোর-কিশোরী আসে ঈদের নতুন পোশাক নিতে। সঙ্গে অভিভাবকেরাও আসেন। পাশাপাশি দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী। ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে তাদের এসব উপহার দেওয়া হয়।
ঈদ উপহার পেয়ে সবার উচ্ছ্বাস বেড়ে যায়। এ সময় শিশু ও অভিভাবকদের উদ্দেশে জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই পবিত্র রমজান মাসে আপনাদের জন্য ঈদ উপহার নিয়ে এখানে আসি। বন্ধুসভায় আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে মনের আনন্দে কাজ করি, আপনাদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগ করে নিই। আমাদের মতো সারা দেশের ১৪৪টি বন্ধুসভার সদস্যরাও অসংখ্য মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। নিজেদের ঈদের খরচের টাকা বাঁচিয়ে আপনাদের জন্য উপহার দিই আমরা। আপনাদের আনন্দেই তো আমাদের ঈদ!’
দ্বিতীয় ধাপে ২৬ মার্চ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জহুরী মহল্লায় ছিন্নমূল শিশুদের একটি দিবাযত্ন কেন্দ্রে আরও প্রায় ১০০ শিশুকে নতুন পোশাক ও তাদের পরিবারের জন্য ঈদের খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক, নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ, সহসভাপতি মাহবুব পারভেজ, রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী ফিরোজ, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক, সাংগঠনিক সম্পাদক নেওয়াজুল মওলা, অর্থ সম্পাদক নূরে আলম, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সায়মন চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শাকিব হাসান, কার্যনির্বাহী সদস্য নাফিউর নূর, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি মাহমুদা মুহসিনা বুশরাসহ অন্য বন্ধুরা।
জাতীয় পর্ষদের নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ বলেন, ‘সবার সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগ করে নেওয়াতেই বন্ধুদের আনন্দ।’
জাতীয় পর্ষদসহ পুরো দেশে ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচির সমন্বয় করছেন সায়মন চৌধুরী। তিনি বলেন, সারা দেশের বন্ধুসভার বন্ধুরা নিজেদের এবং অন্যদের থেকে সহযোগিতা সংগ্রহ করে, নতুন পোশাক ও পরিবারগুলোর জন্য খাদ্যসামগ্রী কিনে, সেগুলো বিতরণ করছেন। বন্ধুদের এই প্রচেষ্টায় ঈদের আনন্দে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে সমাজের নিম্ন আয়ের কিছু মানুষ। বন্ধুসভা বিশ্বাস করে, ঈদের আনন্দ উপভোগ করার অধিকার সমাজের প্রতিটি মানুষের রয়েছে। সেই অধিকারের পূর্ণতা দিতেই আমাদের এই আয়োজন। মানবিক জয়গান চলতে থাকুক।