কল্লোল লাহিড়ীর ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্র করে দিনাজপুর বন্ধুসভা। ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্ম গুগল মিটে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
কল্লোল লাহিড়ী সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যের একজন পরিচিত লেখক। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস হলো ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। এটি ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি দেশভাগের পর বাঙালির যন্ত্রণা, শিকড়ছেঁড়া মানুষের মানসিক কষ্ট এবং টিকে থাকার লড়াইকে ইন্দুবালার জীবনের মাধ্যমে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
প্রধান চরিত্র ইন্দুবালা একজন সংগ্রামী বিধবা। খুলনার কলাপোতা গ্রামের মেয়ে ইন্দুর বিয়ে হয় কলকাতায়। দোজবরে, মাতাল ও জুয়াড়ি এক পুরুষের সঙ্গে। তিন সন্তান নিয়ে অল্পকালেই বিধবা হয় সে। অসহায় ইন্দুবালা যখন ঘোর অন্ধকারে, তখনই লছমী নামের স্বামীহারা মাছ বিক্রেতা এক নারী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
ছেনু মিত্তির লেনে ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের মাধ্যমে শুরু হয় ইন্দুর জীবনের নতুন অধ্যায়। ছোটবেলায় ঠাম্মার কাছে শেখা পূর্ব বাংলার রান্নার সঙ্গে শ্বাশুড়ির শেখানো কলকাতার রান্নার এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়ে ইন্দুবালা নিজেকে সম্পূর্ণ উজাড় করে দেয় হোটেলটি দাঁড় করাতে। নামে হোটেল হলেও সেখান থেকে শুধু অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য কখনোই ছিল না ইন্দুবালার। তার দর্শন ছিল—‘জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর’।
গল্পের প্রতিটি অনুচ্ছেদে নতুন নতুন খাবারের নামের সঙ্গে উঠে এসেছে সেই খাবারকে কেন্দ্র করে ইন্দুবালার জীবনের ইতিহাস। ৭০ বছর বয়সেও ইন্দুবালা একাকিত্বকে সঙ্গী করে প্রতিদিন উনুনের আগুনের মধ্যেই খুঁজে ফেরে জীবনের স্বার্থকতা। মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারার যে আনন্দ, সেই আনন্দই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কুমড়া ফুলের বড়া, বিউলির ডাল, ছ্যাঁচড়া, আম তেল, মালপোয়া, চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল, চন্দ্রপুলি আর কচুবাটার মতো খুব সাধারণ গ্রাম্য খাবারগুলো লেখক এমন অসাধারণভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা যেকোনো পাঠককে ভোজনরসিক করে তুলবে।
সভাপতি শবনম মুস্তারিন বলেন, ‘বইটা পড়তে গিয়ে কঠিন হৃদয়ের পাঠকেরও অজান্তে চোখের পাতা ভিজে যাবে। ইন্দুবালার জীবনের টুকরা টুকরা ঘটনাজুড়ে এক অপূর্ব কাহিনির মধ্যে ডুব দিয়ে পাঠক উপলব্ধি করবে গ্রামবাংলার চিরায়ত মা, মাসি, পিসি আর ঠাকুরমাদের রান্নার মহত্ত্ব।’
পাঠচক্র সঞ্চালনা করেন দপ্তর সম্পাদক আল আবিক উৎস।
বন্ধু, দিনাজপুর বন্ধুসভা