ভৈরবের নান্দনিক দর্শনীয় স্থান, প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্য ভৈরব মেঘনা নদী। এই নদীর বিশেষত্ব—এর ওপর একটি সড়ক সেতু এবং দুটি রেলওয়ে সেতু অর্থাৎ ত্রিবেণী সেতু স্থাপিত হয়েছে। বলা যায়, মেঘনার সঙ্গে ত্রিসেতুর বন্ধন দেখতেও মানুষ এখানে ঘুরতে আসে।
মেঘনা নদীকে ঘিরে জীবিকার প্রয়োজনে দিন দিন বেড়ে চলেছে ছোটখাটো দোকান, ফুড কার্ট, জুসবার, টংদোকানসহ খেলনাপাতির ভাসমান দোকান। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের আনাগোনা থাকে এখানে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল-রাত পর্যন্ত মুখরিত থাকে। কিন্তু জীবিকার প্রয়োজন কিংবা পর্যটকদের সুবিধার্থে সবকিছু গড়ে উঠলেও, নষ্ট হচ্ছে নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ, নীরব হচ্ছে পানির স্রোত, মেঘনা হারাচ্ছে তার জৌলুশ।
প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি ভালো কাজ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ত্রিবেণী সেতুর আশপাশের এলাকা, এবং নদী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছে ভৈরব বন্ধুসভা। ‘নির্মল তীর, সুন্দর ভৈরব, আমার নদী, আমার দায়িত্ব’ প্রতিপাদ্যে ২৪ ও ২৫ অক্টোবর দুই ধাপে এ কার্যক্রম করেন বন্ধুরা।
প্রথমদিন সকাল ছয়টায় বন্ধুরা কয়েকজন মিলে যান মেঘনার পাড়ে। এই ভোরেই কত শত মানুষের আনাগোনা, কেউ শরীর চর্চা করছে, ফেরিঘাটে কয়েকজন মাথায় করে জিনিস নামাচ্ছে, পাখিরা উড়ছে। অনেক দিন পর সূর্যোদয়ের দৃশ্য আর স্নিগ্ধ শীতল সকাল দেখে মনটা শান্ত হয়ে গেল। কিন্তু মেঘনার তীরে প্রবেশ করতেই মনটা ভার করে দিল নোংরা পরিবেশ। হাঁটা-চলাচলের পথে যে ডাস্টবিন রাখা ছিল, ওই জায়গা থেকে পলিথিন শুরু পুরো রাস্তায়, পাথরঘাটেও একই অবস্থা।
বন্ধুসভার সদস্যরা হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক আর বড় পলিথিন নিয়ে নেমে যান কাজে। শুরুতেই পাথরঘাট এলাকায় পরিচ্ছন্নতার অভিযান শুরু হয়, চলে একদম নদীর তীর পর্যন্ত। কাচ ভাঙা, ছেঁড়া জুতা, প্লাস্টিকের বস্তা, বোতল, ফোম, ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, কাগজের ঠোঙার ছড়াছড়ি। সবাই মিলে দুই ঘণ্টা কাজ করতেই শেষ। এরপর পরিষ্কার করা হয় চলাচলের পথ, খেলার মাঠ। এই সকালে মাঠে যাঁরা খেলছিলেন, তাঁরাও যোগ দেন বন্ধুদের সঙ্গে।
দ্বিতীয় দিন নদীতে নেমে পলিথিন, বোতল, প্লাস্টিক, চিপসের প্যাকেটসহ নানা ধরনের ময়লা–আবর্জনা তোলা হয়। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে নদীর পানি থেকে ময়লা পরিষ্কারের কাজ।
মেঘনার পাড়ে অধিকাংশ মানুষ বিকেলে ঘুরতে আসেন। তাই বিকেলে বন্ধুরা আবারও হাজির হন সেখানে। উদ্দেশ্য, সবাইকে সচেতন করা এবং সচেতনমূলক ব্যানার স্থাপন। ‘ভৈরব মোহনা-পরিচ্ছন্নতার প্রতিজ্ঞা’, ‘মেঘনার ভৈরব মোহনা, পরিচ্ছন্নতার প্রতিজ্ঞা’, ‘নদী রক্ষায় প্রতিজ্ঞা করি, পরিচ্ছন্ন ভৈরব গড়ি’, ‘মেঘনা হাসুক, ভৈরব জাগুক’ এগুলো ছিল ব্যানারের প্রতিপাদ্য বিষয়।
ভৈরব বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাফিস রহমান বলেন, ‘আমরা মানুষ কখনো কখনো খুব নিচু কাজ করি; যেমন চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সবার। কিন্তু কজনই-বা কাজ করে বা মাথায় রাখে? আমরা চাইলেই সম্ভব যেকোনো ভালো অভ্যাস বা কাজকে ধরে রাখতে।’
সভাপতি জান্নাতুল মিশু বলেন, ‘আমরা আসলে ভুলে যাই, নদীরও প্রাণ আছে। নদী মারা যায়। যখন নদীকে বর্জ্যে ভরিয়ে ফেলি। নদীর পাড়ের ময়লা আবর্জনা দিন শেষে নদীতেই মিশে কিংবা মানুষ ফেলছে। মেঘনা ভৈরবের প্রাণ। মেঘনাকে বাঁচানো মানে নিজেদের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করা।’
উপদেষ্টা আসাদুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগ নেওয়ার কারণ শুধুই পরিচ্ছন্নতা নয়, এটি একধরনের দায়বদ্ধতার প্রতীক।’
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু সামিয়া, আহনাফ, সিফাত, মাহিন, নিযার, মারজান। মেঘনা বেঁচে থাকুক প্রকৃতির জন্য, জীবিকার জন্য, সুন্দর জীবনযাপনে বিনোদন দর্শন হিসেবে।
বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা