সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বিখ্যাত উপন্যাস ‘লালসালু’ নিয়ে পাঠচক্রের আসর করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা। ২২ অক্টোবর বিকেলে শহরের শহীদ সাটু হল মার্কেটের প্রমিত কার্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
শুরুতে সদ্যপ্রয়াত চট্টগ্রাম বন্ধুসভার উপদেষ্টা মিনহাজ হোসেন ও সৈয়দপুর বন্ধুসভার বন্ধু আরবিন জামানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
মূল আলোচনায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাফিউল হাসান বলেন, ‘লালসালু’ উপন্যাসের নায়ক মজিদ—এক দরিদ্র, শিক্ষিত কিন্তু ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ। একদিন সে পথভ্রষ্ট হয়ে এক অজানা গ্রামে আসে। গ্রামটির বাইরে একটি পুরোনো, পরিত্যক্ত কবর দেখে জানতে পারে, এটি কোনো অজানা ব্যক্তির কবর, কেউ জানে না তিনি কে ছিলেন।
মজিদ সুযোগ বুঝে বলে ওঠে, ‘এটি এক পীরের কবর’, এবং কবরের ওপর লাল কাপড় বিছিয়ে দেয়। সেই লাল কাপড় থেকেই কবরটির নাম হয় ‘লালসালু’। এর পর থেকেই মজিদ ধর্মীয় ভয় ও বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে পীরের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ধীরে ধীরে সে গ্রামের লোকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, ধর্মের নামে নানা নিয়ম-কানুন চাপিয়ে দেয়, বিধবা রহিমাকে বিয়ে করে তার সম্পত্তির ওপর অধিকার লাভ করে এবং নিজেকে গ্রামের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
মজিদের ভণ্ড ধর্মীয় প্রভাব ক্রমেই বাড়তে থাকে। কিন্তু তার অন্তরে জন্ম নেয় অজানা ভয় ও শঙ্কা—যেন সে নিজেই নিজের তৈরি মিথ্যার জালে জড়িয়ে পড়ছে। পরবর্তী সময়ে সে দ্বিতীয় স্ত্রী বসিরনকে বিয়ে করে, যিনি স্বাধীনচেতা ও বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন নারী। বসিরনের আগমন মজিদের অন্তর্দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করে তোলে। শেষ পর্যন্ত মজিদের ভেতর ভয়, অনুশোচনা ও একাকিত্ব নেমে আসে। সে বুঝতে পারে—ধর্মের নামে প্রতারণা করে যে রাজত্ব সে গড়ে তুলেছিল, তা আসলে মিথ্যার ওপর দাঁড়ানো এক ভঙ্গুর সাম্রাজ্য।
পাঠ প্রতিক্রিয়ায় উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘“লালসালু” ধর্মীয় কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ। এটি দেখায়, মানুষ যখন সত্য থেকে দূরে সরে গিয়ে ধর্মকে ব্যক্তিস্বার্থের হাতিয়ার বানায়, তখন তার ভেতরেও জন্ম নেয় অশান্তি, ভয় ও নিঃসঙ্গতা।’
সভাপতি আরাফাত মিলেনিয়াম বলেন, ‘“লালসালু” শুধু এক ব্যক্তির গল্প নয়; এটি আমাদের সমাজের প্রতিচ্ছবি। গ্রামের মানুষদের অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় কুসংস্কার ও নেতার মুখে মিথ্যা ধর্মীয় বুলি আজও দেখা যায়। মজিদ যেন আমাদের চারপাশের সেই সব ভণ্ড মানুষের প্রতীক, যারা ধর্মকে ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করে। উপন্যাসটি পড়ার পর মনে হয়েছে, সত্যিকারের ধর্মের মানে হলো মানবতা।’
পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা শফিকুল আলম, সহসভাপতি ফারহা উলফাৎ রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাসরুফা খাতুন, সহসংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান, অর্থ সম্পাদক আলীউজ্জামান নূর, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক সাঈদ মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক উৎস আসেফ, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান, কার্যনির্বাহী সদস্য আহমেদ ওয়ালিদ, বন্ধু রামিজ আহমেদ, মুশফিক মাহাদী, সাবরিন আখতার, মানসুরা খাতুনসহ অন্য সদস্যরা।
সভাপতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা