‘যাঁরা বই পড়ে, তাঁরা স্বপ্ন দেখতে জানে’

ভৈরব বন্ধুসভার ১৭৯তম পাঠের আসরছবি: আনাস খান

আলতাফ হোসেনের ছোটবেলাটা বড় কষ্টের ছিল। কিছু বোঝার আগেই সে এতিম হয়ে যায়। ঠাঁই হয় মামা বজলুর রহমানের কাছে। আলতাফ হোসেন লেখাপড়ায় খুব একটা ভালো না। নিজের চেষ্টায় একটা চাকরি জোগাড় করতে পারে। তবে সে বজলুর সাহেবের অসম্ভব অপ্রিয় পাত্র হয়ে ওঠে। কারণ, আলতাফ হোসেনকে বিয়ে করার জন্য বজলুর সাহেবের মেয়ে দুলারী গোঁ ধরে বসে থাকে। বিয়ে তো হয় ঠিকই, তবে আলতাফ হোসেন জানে এটা তার নিজের ইচ্ছেতে হয়নি। চাকরিটাও হয়েছে ঠিকই, তবে তাও অন্য কিছুর ইশারায়। পোকারা তার কাছে আসে। কেন আসে?

উত্তরটি জানতে ৭ জুন প্রথম আলো ভৈরব আঞ্চলিক অফিসে পাঠের আসরে বসেন ভৈরবসভার বন্ধুরা। মুদ্রিত বই পড়ার ১৭৯তম আসরের বিষয় ছিল নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘পোকা’। সঞ্চালনা করেন পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক তানসি নাহার।

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা আসরের শুরুতেই বন্ধুসভা কী, বন্ধুসভার গুরুত্ব, বন্ধুসভায় পাঠচক্রের গুরুত্ব আলোচনা করে বলেন, ‘বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে মুদ্রিত বই পড়ার জন্য আমাদের প্রয়াস চলমান রাখা হয়েছে আট বছর ধরে।’

পাঠচক্র শেষে ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: আনাস খান

দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক শাহরিয়ার ইবাদ লেখক পরিচিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ দুই বাংলায় ছিলেন সমান জনপ্রিয়। লেখনশৈলী দিয়ে তিনি পাঠককে মুগ্ধ করে রাখেন। হিমু, মিসির আলী, শুভ্র, রূপা—তাঁর অমর সৃষ্টি। পাঠক হিসেবে এই চরিত্রগুলো আমরা নিজেদের মধ্যে খুঁজে পাই।’
কার্যকরী সদস্য রিফাত হোসেন গ্রন্থ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘ক্যাশিয়ার জনাব আলতাফ হোসেন ছোটবেলা থেকেই বড় হয়েছেন দূর সম্পর্কের মামা বজলুর রহমানের কাছে। বজলুর রহমানের ছোট বোন মিনু অনেক বছর আগে জ্বরে মারা যান। মিনুর লাশ যে ঘরে ছিল, সে ঘরে গিয়ে দেখলেন ঘরভর্তি লক্ষ লক্ষ তেলাপোকা। ঘরে মিনুর লাশ নেই, পোকাদের মাঝখানে বসে আছে দুই বছর বয়সী আলতাফ। তারপর ঘটতে থাকে নানা ঘটনা।’

গ্রন্থ আলোচনায় আরও অংশ নেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মহিমা মেধা। তাঁদের আলোচনায় ওঠে আসে, আলতাফ সাহেব পোকাদের ভাষা বুঝতেন, এটা অন্যরা শুনলে ভাবতো তিনি রসিকতা করছেন। একসময় পোকা ভর করে আলতাফ সাহেবের আশপাশের মানুষকে। তারাও পোকার কথা বুঝতে শুরু করেন, ঘরভর্তি দেখতে পান লাখ লাখ পোকা গিজগিজ করছে।

সভাপতি প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আমাদের সবার ভেতর একধরনের পোকা বাস করে; ভয়ের পোকা, লোভের পোকা, ক্ষমতার পোকা। বাইরের পোকা যেমন ক্ষতি করে, ভেতরের পোকাগুলোও ঠিক তেমনি। ভয় এবং আতঙ্কের মিশেলে আক্ষরিক অর্থে বইটি অসাধারণ ছিল। যাঁরা বই পড়েন, তাঁরা স্বপ্ন দেখতে জানেন। বই পড়া মানুষের ভেতরের সত্তাকে জাগিয়ে তোলে।’

কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা
ছবি: আনাস খান

সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমেদ বলেন, ‘“পোকা” অদ্ভুত তো বটেই, কিছুটা মজারও। মনে হতে পারে এসব অবাস্তব কাহিনির কোনো অর্থ নেই। কিন্তু সবকিছুরই যে অর্থ থাকতে হবে, সেটারও কোনো মানে নেই। কোনো কিছু ভালো লাগার হলে একক ভাবেই সেটা ভালো লাগে। পোকাদের মতো সমষ্টির প্রয়োজন হয় না।’

গ্রন্থ আলোচনায় আরও যুক্ত হন ঢাকা বেতারের খণ্ডকালীন শিল্পী আবদুর সবুর খান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বইটি আগে পড়া হয়নি, এখন আলোচনা শুনে ঋদ্ধ হলাম।’
শিশুবিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বই পড়া, গল্প শোনা জ্ঞানের বিকাশ ঘটায়। প্রতিটি মা যেন গল্প পড়িয়ে ঘুম পাড়ান তাঁর সন্তানকে। বই সব সময়ের সঙ্গী।’
ডাক্তার শামীম আরা খান বলেন, ‘ফেসবুকে আপনাদের কার্যক্রমগুলো নিয়মিত দেখি। আজ জ্ঞাননির্ভর আলোচনার সঙ্গী হতে পেরে ভালো লাগল।’

পাঠের আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্ধু নাহিদ হোসাইন, ছিদরাতুল রশিদ, জান্নাতুল মিশু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরফান হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ রহমান, জেন্ডার-সমতাবিষয়ক সম্পাদক আফিসা আলী, সহসাংগঠনিক আনাস খান, দপ্তর সম্পাদক জিহাদ হোসেনসহ সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের একগুচ্ছ শিক্ষার্থী।

পাঠচক্র শেষে মনোযোগী শ্রোতাদের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কুইজ পর্বটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মানিক আহমেদ। বিজয়ী হন জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল আক্তার, সামিরা তাবাসসুম ও রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের উম্মে হানি। পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় বই।

পাঠচক্র ও পাঠাগার সম্পাদক, ভৈরব বন্ধুসভা