ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার পাঠচক্রে ‘কখনো আমার মাকে’

কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের বন্ধুসভা কক্ষে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরছবি: বন্ধুসভা

আনিসুল হক ‘কখনো আমার মাকে’ উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের অপরিমেয় ভারকে অল্প কথায়, স্বল্প ঘটনায় যেভাবে সর্বজনীন করে তুলেছেন, পাঠকের চেতনায় ঘা মেরেছেন, বুকের ভেতর তোলপাড় তুলেছেন; তার দৃষ্টান্ত আমাদের খুব বেশি আছে বলে মনে হয় না। হারুকি মুরাকামি যেমন করে ‘নরওয়েজিয়ান উড’ উপন্যাসে প্রেমের গল্পের ফাঁকে ফাঁকে জুড়ে দিয়েছেন রাজনীতি, অল্প কথায় কিন্তু প্রবলভাবে। আনিসুল হক এই উপন্যাসে হারিয়ে যাওয়া ভূগোলের কথা বুনতে বুনতে স্বাধীনতাযুদ্ধকে এনেছেন অল্প পরিসরে, অথচ অসম্ভব মহিমায়।

৯ মার্চ ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার পাঠচক্রের আসরে আনিসুল হকের ‘কখনো আমার মাকে’ উপন্যাস নিয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মো. শামিম মন্ডল। সন্ধ্যা ছয়টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের বন্ধুসভা কক্ষে পাঠের আসরটি অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি সাইদুল হাসান।

পাঠ আলোচনায় সাইদুল হাসান বলেন, ‘কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের উপন্যাস “কখনো আমার মাকে” পড়ে চোখ ভিজে যায় জলে। নিজেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। মনের অন্তর্জালে আনমনে ভেসে ওঠে নিজের মায়ের ছবি। দেখি, মা আমার আঁচলের গন্ধ বিলিয়ে দিচ্ছে চোখে-মুখে। ভাত মেখে অপেক্ষা করছে। সন্তান খাবে, মা চেয়ে চেয়ে দেখবে। আমি সাঁতার কাটি তেপান্তরের মাঠে। কাদা জল মেখে ফুটবল খেলি বাল্যবন্ধুদের সঙ্গে। খালের অল্প জলে হাতরে ধরি শিং, কই আর টেংরা মাছ। কাঁটা ফুটে এসে কী ভীষণ ব্যথা। সন্ধ্যারাতে হারিকেনের আলো থেকে তাপ নিয়ে মায়ের হাতের সেবা। সকালে ঘুম থেকে উঠে কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা। রেললাইনের ধার দিয়ে হাফপ্যাডেল মেরে সাইকেল চালানো। গাছ থেকে আতা ফল পেরে ভাগ করে খাওয়া। মাবলুর মতো কতশত স্মৃতি এখন আমার চোখে।’

বন্ধুদের উদ্দেশে সাইদুল হাসান বলেন, যাঁরা ‘কখনো আমার মাকে’ পড়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ। আর যাঁরা এখনো পড়েননি, দ্রুত পড়ে ফেলবেন। যেখানেই থাকেন, মাকে মনে রাখবেন, মাকে ভালোবাসবেন। ভালোবাসবেন দেশকে।

পাঠচক্র শেষে কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের সঙ্গে ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

ক্যামব্রিয়ান কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান আশরাফুল আলম বলেন, ‘“কখনো আমার মাকে” উপন্যাসটি মায়ের যে মূর্তি আমাদের উপহার দিয়েছে, তা তো আমারই মা, আমাদের মা। যে বাবা আছেন, তিনি তো আমার, আমাদের বাবা। আমাদের বাবারা তো এমনই। আর যেভাবে ছোটবেলার সম্পর্ক, আমাদের গ্রামের প্রকৃতি ইত্যাদি তুলে এনেছেন, তা–ও অসম্ভব ভালো।’

পাঠচক্রে উপস্থিত বন্ধুরা বইয়ের বিভিন্ন অংশ পাঠ করে শোনান। ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার অর্থ সম্পাদক অনিক সরকার বলেন, ‘“কখনো আমার মাকে” উপন্যাস আমার ছেলেবেলার স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছে। গ্রামে বাল্যবন্ধুদের সঙ্গে চোরকাঁটা ভরা মাঠে খেলা, বৃষ্টিতে তুমুল ভেজা শৈশব, আম আঁটির ভেঁপু, বেলা শেষে গরুর পাল নিয়ে বাড়ি ফেরা, রাতে হারিকেনের আলোয় পড়তে বসা; এরপর চুপটি করে মায়ের কাছে দৌড়ে গিয়ে মাটির চুলায় চোঙা দিয়ে চুলা ধরানো অবস্থায় মায়ের কোলে ওঠা।’ বন্ধু মীর মোশাররফ অমি বলেন, ‘মফস্‌সল শহরে বেড়ে ওঠা। উপন্যাসটি পড়ার সময় মনে হয়েছে লেখক আমার ছেলেবেলার কথাগুলোই নিপুণ তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দপ্তর সম্পাদক মেঘা খেতান, জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক শারমিন আরা তিশা, বইমেলা সম্পাদক হামিদুল ইসলাম, বন্ধু খাদিজা জান্নাত, তাহসিন আহমেদ ও নলছিটি বন্ধুসভার দুই বন্ধুসহ অন্তত ১৬ বন্ধু।

জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা