হুমায়ূন আহমেদের ১৯৭১ উপন্যাস নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা। ১৭ মার্চ রাত ১০টায় অনলাইনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। উপন্যাসের কাহিনি এক পাকিস্তানি মেজর ও এক বাংলাদেশি গ্রাম নিয়ে। কিন্তু এক সূক্ষ্ম পথে লেখাটি একজন পাকিস্তানি সৈনিক ও এক বাঙালি যুবকের গল্প হয়ে উঠেছে।
উপন্যাসটি সম্পর্কে বন্ধু রাফাত আহমেদ বলেন, ‘ছোট্ট একটা গ্রাম নীলগঞ্জ। নীলগঞ্জের জলাভূমির দিকটায় একদল কৈবর্ত থাকে। গ্রামের সঙ্গে তাদের খুব একটা যোগাযোগ নেই। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ১৯৭১-এর ঘটনা এই নীলগঞ্জের। ’৭১-এ মিলিটারিরা এই গ্রামে আসছে। উপন্যাসে কোনো যুদ্ধের ঘটনা নেই। কিন্তু গল্পটি আমাদের শেষ পর্যন্ত এমন এক জায়গায় নিয়ে যাবে, যেখানে চাইলেই যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এই গল্পতে সামগ্রিকভাবে হুমায়ূন আহমেদ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাঙালির আত্মসমালোচনা, বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি, শত্রুদের নৃশংসতাও উঠে এসেছে।’
সাধারণ সম্পাদক আলী আকরাম বলেন, ‘দারিদ্র্যে জর্জরিত গ্রাম নীলগঞ্জ। হঠাৎই আগমন ঘটে মিলিটারিদের। শান্ত প্রান্তরে আগুন জ্বলে ওঠে, একের পর এক লাশ পড়তে থাকে, আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে যায়। পাকিস্তানি বাহিনীর নিরীহ বাঙালিদের ওপর নির্যাতনের চিত্র দেখানো হয়েছে। সময়টা যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে। মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধারা প্রাণ দিচ্ছে, এমন কাহিনি আমরা কমবেশি বিভিন্ন যুদ্ধভিত্তিক বইয়ে পড়েছি। কিন্তু এখানে দেখানো হয়েছে পরোক্ষ যুদ্ধ। যোদ্ধাদের বাঁচাতে অসহায়, নিরীহ গ্রামবাসীও জীবন দিচ্ছে। রফিক চরিত্রটা বেশ রহস্যময়। পড়া শেষে মনে হয়েছে যুদ্ধ আসলে সেসময় সবাই-ই করেছে। কিন্তু যুদ্ধের প্রকৃতি ভিন্ন।’
পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘লেখক মাত্র একটি দিনকে জুড়ে সমগ্র উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট অপূর্বভাবে সাজিয়েছেন। নীলগঞ্জ নামের হতদরিদ্র একটি গ্রামে একাত্তরের একদিন হঠাৎ পাকিস্তানি সৈন্যরা উপস্থিত হয়। সঙ্গে থাকে রকিফ নামের গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। আর ওই দিন ঘটে চলে তাদের একের পর এক বর্বরতা। কিন্তু নীলগঞ্জের রাত্রি তার গাঢ় অন্ধকার নিয়ে অপেক্ষা করছিল অন্য কোনো গল্পের। গল্পটা ছিল যুদ্ধের। মুক্তিযুদ্ধের। যাঁরা ইতিহাসের মাত্র একটি পাতায় সমগ্র একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ওপর চোখ বোলাতে চান, তাঁদের কাছে বইটি থাকবে স্মরণীয় হয়ে।’
পাঠচক্রে আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি নুসরাত পাইরিন, ফাল্গুনী ভট্টাচার্য, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদ আনোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহনাফ হাসান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক ইজাজ বিন হোসাইনসহ অন্য বন্ধুরা।