৫৮ বছর বয়সী সেলিম হোসেন। থাকেন চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী এলাকায়। ভ্যানগাড়ি চালিয়ে স্ত্রী হোসনে আরা বেগমসহ ছয় সন্তানকে নিয়ে টানাপোড়েনের সংসার তাঁর। এর মধ্যেই ঘটে আরও বড় একটি দুর্ঘটনা। চার মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন সেলিম হোসেন। এখন পুরো পরিবার নিয়ে বিপদে তিনি। অসহায় সেলিমের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্ধুসভা। সেলিমের পড়ুয়া সন্তান নওরীন আক্তারের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা।
প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি করে ভালো কাজ’-এর অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩১ অক্টোবর বিকেলে বন্ধুরা ছুটে যান সেলিম হোসেনের বাসায়। সেখানে তাঁর পরিবারের সঙ্গে মেতে ওঠেন আড্ডায়। নওরীনের পড়াশোনার জন্য তুলে দেন কিছু অর্থ এবং প্রতি মাসেই পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দেন। এ সময় সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম তানভীর, সহসভাপতি নুরুজ্জামান খান ও অর্থ সম্পাদক এ আর আছাদ উপস্থিত ছিলেন।
সেলিম হোসেনের ছয় সন্তানের মধ্যে বড় দুই মেয়ে অল্প পড়াশোনা করেই বন্ধ করেছেন। বর্তমানে তাঁরা দুজনই বিবাহিত। বাকি চার সন্তানের মধ্যে মেয়ে শিল্পী আক্তার চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ছেলে রিফাত হোসেন এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন ভাটিয়ারীর বিজয় স্মরণী কলেজ থেকে। আরেক ছেলে বৃত্তি নিয়ে পড়ছে ভাটিয়ারী বিজয় স্মরণী স্কুলে। সবচেয়ে ছোট সন্তান নওরীন ভাটিয়ারী হাজী টিএসি উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
দুই মেয়ের বিয়ে হলেও বর্তমানে ছয় সদস্যকে নিয়ে টানাপোড়েনের সংসার সেলিম হোসেনের। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর দুই বেলা দুমুঠো ঠিকঠাক খেতেই বেগ পেতে হয় তাঁর পরিবারের সদস্যদের। সেলিমের অল্প কিছু আয় আর ছেলে রিফাত হোসেনের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পার্ট টাইম চাকরি করে উপার্জিত মাসিক আট হাজার টাকায় চলে এখন সংসার। এ অবস্থায় বেশ কষ্টে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সন্তানেরা।
নওরীন এসএসসি পাস না করা পর্যন্ত তার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধুরা। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সভাপতি মিনহাজ হোসাইন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্ধুসভা সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে থাকে। এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভালো কাজ বাছাই করতে গিয়ে আমরা দীর্ঘমেয়াদি কাজকে গুরুত্ব দিয়েছি। নানাভাবেই তো ভালো কাজ করা যায়। তবে আমরা চেয়েছি একটি অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। এটি হয়তো ব্যতিক্রমী কোনো কাজ নয়। কিন্তু টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে আরেকজন শিক্ষার্থীর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বন্ধুদের জন্য একটু কঠিন। আমরা কঠিনকেই বেছে নিয়েছি। নওরীন যাতে কোনোভাবেই পড়াশোনা বন্ধ না করে, সেদিকে নজর থাকবে আমাদের।’ সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম তানভীর বলেন, ‘শুধু নওরীন নয়, সেলিম হোসেনের পুরো পরিবারের দিকেই দৃষ্টি রাখব আমরা। নানা প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।’
সহসভাপতি, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা