আলো ছড়াচ্ছে সিলেট বইমেলা

স্টল ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই দেখছেন পাঠকেরা
ছবি: আনিস মাহমুদ

দেখতে দেখতে আট বছর হয়ে গেল। মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন সিলেট বইমেলার যাত্রা শুরু হলো! ভাবতেই অবাক লাগে, সিলেট বন্ধুসভার এ আয়োজন এখন পুরো সিলেটের বইপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে। বর্তমানে এটি আর কেবল বন্ধুসভার আয়োজনেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এ মেলাকে সিলেটের আপামর সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা নিজেদের বইমেলা বলেই মনে করে থাকেন।

তিন দিন, সাত দিন—এভাবে বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে পক্ষকালব্যাপী সিলেট বইমেলার আয়োজন শুরু হয়। তবে এবার তা ১১ দিনব্যাপী হচ্ছে। সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবারই এ মেলা চলে। ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা দুইটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। মেলায় ঢাকা ও সিলেটের ২০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষের সমাগম ঘটছে।

সিলেট বন্ধুসভার উদ্যোগে আয়োজিত বইমেলা শুরুর আগে-পরে সিলেটে আরও নানা প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন বইমেলার আয়োজন করেছে। তবে নিয়মিত এমনটা ঘটা করে জমজমাট আয়োজনের উদাহরণ কমই আছে। মেলায় অংশ নিতে সিলেট বিভাগের চার জেলা থেকেও বইপ্রেমীরা ছুটে আসছেন। তাঁরা জটলা বেঁধে আড্ডা জমাচ্ছেন, স্টল ঘুরে পছন্দের বই কিনছেন। উপচে পড়া ভিড় আর সাংস্কৃতিক আয়োজনে মুখর হয়ে উঠছে প্রতিটি দিন। এর বাইরে সাহিত্যকেন্দ্রিক আলোচনা সভা, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, লেখক আড্ডাসহ নানা উদ্যোগ মেলাকে করেছে প্রাণবন্ত ও রঙিন। এ ছাড়া প্রতিবছর সিলেটের একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিককে বইমেলায় সম্মাননাও দেওয়া হয়।

আগের বছরের প্রয়াত সিলেটের একজন গুণীজনকে পরের বছরের বইমেলা উৎসর্গ করা হয়ে থাকে। এবারের মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে দুজনকে। তাঁরা হচ্ছেন আশির দশকের কবি ফজলুল হক এবং সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিসফাক আহমদ।

বইমেলার উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে মেলা শুরু হয়। উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামীম রেজা। এ পর্বে সিলেটের বিশিষ্টজনেরা অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পাঠাভ্যাস বাড়াতে প্রথম আলো বন্ধুসভা আয়োজিত বইমেলা আট বছর ধরে সিলেটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে নগরের সুরমা নদীর পাড়ে এ বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ অন্যদিকে শামীম রেজা পাঠক তৈরি করতে সিলেট নগরের পাড়া-মহল্লায় বইমেলা আয়োজনের বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার জন্য সিটি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান।

পরে বিশিষ্ট কবি ও গবেষক মোস্তাক আহমাদ দীনকে ‘সাহিত্য সম্মাননা পদক ২০২৩’ প্রদান করা হয়। পুরস্কৃত লেখকের হাতে সম্মাননা স্মারক ও নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দেন অতিথিরা। মোস্তাক আহমাদ দীন বলেন, ‘পুরস্কার একজন লেখককে দায়িত্বশীল করে। পরিকল্পিত ও অসমাপ্ত কাজগুলো করার জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়। এ পুরস্কারও আমাকে এদিকে ধাবিত করবে।’

২০১৬ সালে সিলেট বইমেলা শুরু হয়েছিল। এর পর থেকে টানা এ আয়োজন চলছে। সিলেট বন্ধুসভা সমাজের অন্ধকার তাড়াতে যেমন কাজ করছে, তেমনই বইমেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নিরন্তর আলোও ছড়াচ্ছে। পাঠাভ্যাস বাড়াতে বইমেলার মঞ্চে খুদে শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিবছর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও কুইজ প্রতিযোগিতারও আয়োজন করছে। বিজয়ীদের উপহার হিসেবে বই তুলে দেওয়া হয়।

শত কর্মব্যস্ততা পেছনে ঠেলে বইপ্রেমীরা প্রতিদিন মেলার মাঠে ভিড় করছেন, আড্ডায় মুখর হচ্ছেন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এ মেলাকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করে নিয়েছেন। তাই মেলার যেকোনো অসংগতি দূর করতে িনজ উদ্যোগেই তাঁরা বন্ধুসভার বন্ধুদের পাশাপাশি এক কাতারে দাঁড়াচ্ছেন। এটাই তো বন্ধুদের বড় প্রাপ্তি। এমন বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ দেশের অন্যান্য বন্ধুসভাও নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সিলেট বন্ধুসভা হতে পারে উদাহরণ।