মাগুরা বইমেলা ও পেছনের গল্প

মাগুরা বইমেলায় প্রথম আলো বন্ধুসভার স্টলে সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানছবি: বন্ধুসভা

এ বছর দেশের বিভিন্ন জেলায় বইমেলার আয়োজন হতে দেখেছি। অধিকাংশই হয়েছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে। তবে মাগুরায় বইমেলা হয়েছে স্বাধীনতার মাস মার্চে। এবার বেশ কিছু কারণে মাগুরা বইমেলার গল্পটা একটু ভিন্ন।

ফেব্রুয়ারিতে আমরা বন্ধুসভা থেকে বইমেলা আয়োজনের জন্য উৎসাহমূলক একটা চিঠি পাই। তার পর থেকে অপেক্ষা করছিলাম প্রশাসনের পক্ষ থেকে বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগের জন্য। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এসেও কোনো উদ্যোগ দেখা গেল না। গত বছরও মাগুরায় বইমেলা আয়োজন করা হয়নি। এবার মাগুরার চার উপজেলার মধ্যে শুধু মহম্মদপুর উপজেলায় ফেব্রুয়ারিতে তিন দিনের বইমেলা আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু জেলা শহরে বইমেলা আয়োজন না হওয়ায় অনেক কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে ক্ষোভ লক্ষ করি।

মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে ‘মাগুরা বইমেলা ২০২৪’-এর উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান
ছবি: বন্ধুসভা

বিষয়টি নিয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে বন্ধুসভার বন্ধুরা বৈঠকে বসি। প্রথমে বন্ধুসভার পক্ষ থেকে ছোট পরিসরে একটি বইমেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করি। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে আমাদের মনে হলো আরও বড় পরিসরে আয়োজন করতে পারলে ভালো হয়। এরপর প্রথম আলোর প্রতিনিধি কাজী আশিক রহমানের মাধ্যমে মাগুরা জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক (এমজেএন) নামে সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের সঙ্গে কথা বলি। স্থানীয়, ঢাকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মাগুরার সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত এ সংগঠনটি স্থানীয় সাংবাদিকদের দক্ষতা ও জেলার শিল্প–সংস্কৃতির উন্নয়নে কাজ করে। স্বাধীনতার মাসে বইমেলা আয়োজনের এই প্রস্তাব পেয়ে তারা সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নেমে পড়ে।

সাংবাদিক ও আমরা বন্ধুসভার বন্ধুরা চেয়েছিলাম, এই আয়োজনে আরও প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে। তারই অংশ হিসেবে মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ রেজভী জামানের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাই। উনি পরিকল্পনা শুনে কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেন। অধ্যক্ষ রেজভী জামানকে আহ্বায়ক এবং মাগুরা জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব রূপক আইচকে সদস্যসচিব করে মাগুরা বইমেলা-২০২৪ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে ‘একুশের রক্তরাঙা পথ বেয়ে স্বাধীনতা’ শীর্ষক মোটো চূড়ান্ত করা হয়।

পরবর্তী সময় বইমেলা সফল করতে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে মাগুরা জেলা পরিষদ, মাগুরা পৌরসভা ও সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন। ৭ মার্চ বেলা তিনটায় মাগুরা বইমেলা ২০২৪-এর উদ্বোধন করেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান। শহীদ বেদিতে দাঁড়িয়ে জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়ক জানালেন, তিনি চান এমন আয়োজন মাগুরায় নিয়মিত হোক। আশা প্রকাশ করে বলেন, এবার তিন দিনব্যাপী হলেও ভবিষ্যতে আরও বেশি দিন নিয়ে মাগুরা বইমেলার আয়োজন করা হবে।

বইমেলায় শিশুদের জন্য ছিল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
ছবি: বন্ধুসভা

বইমেলা ঘিরে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। এই কার্যক্রমের সমন্বয় করেছেন সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশালতা মল্লিক। বইমেলায় প্রথম আলো বন্ধুসভা, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। ছোট পরিসরে আয়োজন হলেও প্রতিদিন বইমেলাকে কেন্দ্র করে কলেজ চত্বরে সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে।

স্থানীয় কবি-সাহিত্যিক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বইমেলায় বেশ কিছু নতুনত্ব ছিল। এ কারণে মানুষের আগ্রহ বেশি ছিল। প্রথমত, মাগুরা শহরে এবারই প্রথম সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে বইমেলার আয়োজন হয়েছে। জায়গাটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে ও খোলামেলা হওয়ায় মানুষ পরিবার নিয়ে আসতে স্বস্তি বোধ করেছে। এ কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের কাজ করেছেন একদল সাংবাদিক ও শিক্ষক। সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততাও বেড়েছে। বইমেলা উপলক্ষে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক পরিবেশনাতেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশুরা অংশ নেয়। ৯ মার্চ রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুমার কুন্ডু বলেছেন, এবারের বইমেলার আয়োজনে স্থানীয় বই পাঠকদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আগামী বছর এক সপ্তাহব্যাপী বইমেলা আয়োজনের ঘোষণা দেন তিনি। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন।

অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক ও সভাপতি, মাগুরা বন্ধুসভা