একুশের চেতনা বৃথা নয়

জাবি বন্ধুসভার ভাষা উৎসব ২০২৪

ভাষা হলো মানুষের অভিব্যক্তি প্রকাশের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম। প্রতিটি ভাষারই একটি আলাদা মাধুর্য আছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের নিজেদের আঞ্চলিক ভাষায় ভাব আদান-প্রদান করে থাকে। প্রতিটি ভাষার উৎপত্তি সেই অঞ্চলের প্রচলিত সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ সংস্কৃতির বিষয়কেই লালন করে ওই অঞ্চলের ভাষা। প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষাই হলো সেই অঞ্চলের প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রবহমান সাংস্কৃতিক ধারা। তাই আঞ্চলিক ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ‘একুশের চেতনা বৃথা নয়’ স্লোগানে ভাষার মাস উপলক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা আয়োজন করে ‘ভাষা উৎসব ২০২৪’।

উৎসবটি ‘আঞ্চলিক ভাষায় আমার গল্প’ ও ‘বাংলা টাইপোগ্রাফি ও ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতা’—দুটি অংশে বিভাজিত ছিল। আয়োজন করা হয় অনলাইনে। যেখানে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত অসংখ্য শিক্ষার্থী অংশ নেন। আঞ্চলিক ভাষায় আমার গল্পে প্রতিটি প্রতিযোগী নিজের অঞ্চলের ভাষায় দুই মিনিটের একটি ভিডিও বানিয়ে গুগল ফর্মের মাধ্যমে জমা দেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ২০টি ভিডিও জমা পড়ে। অন্যদিকে বাংলা টাইপোগ্রাফি ও ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীরা ‘ভাষায় মিলে মুক্তি’ বাক্যটি টাইপোগ্রাফ বা ক্যালিগ্রাফ করে জমা দেন। যেখানে অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা ফন্ট ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল।

সভাপতি সুমাইয়া জামান জানান, পুরস্কার হিসেবে সেরা তিনজনকে ক্রেস্ট ও সেরা পাঁচজনকে সনদ প্রদান এবং বিজয়ীদের নিয়ে বিশেষভাবে জাবি বন্ধুসভার ম্যাগাজিন সুহৃদে ফিচার করা হবে। ভাষার মাসজুড়েই এই আয়োজন চলে।

‘আঞ্চলিক ভাষা হীনম্মন্যতার বিষয় নয়; বরং গৌরবের ব্যাপার।’
ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হামিদা জান্নাত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার বিগত কমিটির সভাপতি ও ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হামিদা জান্নাত বলেন, ‘আঞ্চলিক ভাষা হীনম্মন্যতার বিষয় নয়; বরং গৌরবের ব্যাপার। প্রত্যেকের নিজ নিজ আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে কোনো লজ্জা নেই। প্রকৃত প্রস্তাবে আঞ্চলিক ভাষাই সে অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা। আঞ্চলিক ও প্রমিত ভাষাকে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে দাঁড় করানোটাই একটা ভুল চিন্তা। এ দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক হওয়া উচিত সৌহার্দ্যের। সব গোঁড়া চিন্তাকে পেছনে ফেলে জাবি বন্ধুসভার ভাষা নিয়ে এই আয়োজন সত্যিই মনোমুগ্ধকর।’

ভাষা উৎসব ২০২৪-এর আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমানের মতে, ‘ভাষা দিবস নিয়ে বিভিন্ন আয়োজন হলেও আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে কাজ আসলে খুবই কম হয়। এ জন্য এবার আমরা চেষ্টা করেছি আঞ্চলিক ভাষার মর্ম তুলে ধরা যাবে, এমন কিছু করতে। পাশাপাশি বাংলা টাইপোগ্রাফি এবং ক্যালিগ্রাফি প্রচার করতে চেয়েছি।’

আঞ্চলিক ভাষায় আমার গল্পের সেরা তিন বিজয়ী হয়েছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অশেষ লস্কর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্পণা রানী দাস এবং বোরহান উদ্দীন। এ ছাড়া বাংলা টাইপোগ্রাফি এবং ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় প্রায় ২৫ জন। সেরা দুজন হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জান্নাতুন্নেছা বিনতে জামান ও লুৎফুন নাহার।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, জাবি বন্ধুসভা