চিরকাল আমাদের মনে বেঁচে থাকবেন মিজানুর রহমান
রাজশাহী বন্ধুসভার বন্ধুদের জন্য হৃদয় ভারাক্রান্ত একটি দিন। সবার পাশে থাকা হাসিখুশি মানুষটি আর নেই, এই বিশ্বাসই যেন কঠিন। মিজানুর রহমান নেই, কথাটুকু বলতেও গলা ধরে আসে।
রাজশাহী বন্ধুসভার সভাপতি মিজানুর রহমানের মৃত্যুতে ২৩ জুলাই রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন ভবনে এক শোকসভার আয়োজন করা হয়। ভালোবাসায় সিক্ত স্মৃতিচারণায় তাঁকে স্মরণ করতে জড়ো হন বন্ধুসভার সদস্য, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষী। চারপাশে যেন শুধু একটাই অনুভূতি—অপূরণীয় এক শূন্যতা।
মিজানুর রহমান সরকারের আত্মীয়রাও শামিল হন। তাঁর বোন উপস্থিত হতেই শোকে স্থির হয়ে যান এবং বেশ কিছুক্ষণ দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকেন। ভেতরে ঢোকামাত্রই তিনি ব্যানারে ভাইয়ের ছবি ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভাইয়ের প্রতি বোনের এ ভারাক্রান্ত আবেগ দেখে উপস্থিত সবারই চোখে পানি এসে যায়।
বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিকা আকতার। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের গলায় মিজানুর রহমানের প্রিয় একটি গান—‘একটা হাওয়ার গাড়ি’ দিয়ে। এরপর তাঁর স্মৃতিচারণায় বন্ধুসভায় কাটানো কিছু মুহূর্তের ছোট ভিডিও প্রদর্শিত হয়।
মিজানুর রহমানের বোন লিপি ইব্রাহিম বলেন, ‘আমার ভাই গত ১৪ বছর ক্যানসার নিয়ে হাসিমুখে সবার সঙ্গে বেঁচে ছিলেন। আমার অনেক কম বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর এসএসসি পরীক্ষা দিতে ভাই আমাকে সাহায্য করেন। শ্বশুরবাড়িতে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় যখন পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল, তখন আমার ভাই বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে এসে আমাকে পড়িয়ে গেছেন। আমার ভাই আমার বন্ধু, আমার সাথি, আমার অভিভাবক।’
মিজানুর রহমানের স্ত্রী রুকসানা মমতা স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘গান–বাজনার প্রতি তাঁর (মিজানুর রহমান) বিশেষ আগ্রহ ছিল। তিনি প্রায়ই রিকশায় বসে গুনগুন করে আমাকে গান শোনাতেন। উনি এভাবে আমাদের একা করে চলে যাবেন, কখনো কল্পনাও করিনি।’
প্রথম আলো রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ বলেন, ‘মিজানুর রহমান মৃত্যুর পেয়ালায় জীবন ঢেলে খেয়েছেন। মৃত্যু তাঁকে কখনো নিতে পারবে না। তিনি চিরকাল আমাদের মনে বেঁচে থাকবেন।’
অনুষ্ঠান শেষে মিজানুর রহমানের মৃত্যুতে ও রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও শোক প্রকাশ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মিজানুর রহমান ১১ জুলাই ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিজানুর রহমানের মামাতো ভাই শহীদুল ইসলাম, বোন নাবিলা সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন বকুল, সহকর্মী আবু বক্কর সিদ্দিকি, শাহ্ মখদুম কলেজের অধ্যক্ষ এস এম রেজাউল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মঞ্জুর মোরশেদ, মাউশি রাজশাহীর সহকারী পরিচালক আলমাছ উদ্দিন মল্লিক, রাজশাহী প্রথম আলো আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক মোসা. রেজিনা খাতুনসহ অন্যান্য শিক্ষক ও রাজশাহী বন্ধুসভার বন্ধুরা।
সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী বন্ধুসভা