শিশুদের নতুন জামা ও তাদের পরিবারকে নগদ অর্থসহায়তা

২১০ জন শিশুকে দেওয়া হয়েছে রঙিন জামা
ছবি: জিসান খান

বাবা ফজুল হক পুরোনো জিনিস কেনাবেচা করেন, সংসারের ব্যয় মেটানোর কাজে যুক্ত হয়েছেন মা বিউটি বেগমও। কাঁধে বিশাল ঋণের বোঝা, দুজন মিলে কোনোরকমে সংসার টেনে নিচ্ছেন। কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের ভৈরবপুর এলাকার এই দম্পতির এ বছর ঈদে মেয়ে চাঁদনী ও ছেলে পিয়ান্তর জন্য নতুন জামা কিনে আনতে না পারার দুঃখ যেন সহ্য হওয়ার নয়। জানতে পেরে তাঁদের দুঃখ ঘুচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে ভৈরব বন্ধুসভা।

এবার রঙিন জামা পরেই ঈদ করেছে এই দুই ভাইবোন। চাঁদনীর মতোই আরও শত সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মুখে ভৈরব বন্ধুসভা বিগত ছয় বছর ধরে হাসি ফুটিয়ে চলছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের ‘সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০ এপ্রিল ২১০ শিশুর মধ্যে রঙিন জামা বিতরণ ও ২০টি দরিদ্র পরিবারকে অর্থসহায়তা প্রদান করা হয়।

শিশুদের রঙিন জামা দিতে পেরে বন্ধুরাও খুশি
ছবি: জিসান খান

তপ্ত রোদকে উপেক্ষা করে এদিন সকাল ১০টায় রঙিন জামা নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চবিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন বন্ধুরা। রঙিন জামার নকশায় যেন আনন্দের ডাক, সেই আনন্দের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয় শতাধিক শিশু। নতুন জামা হাতে পেয়ে মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আমার অনেক আনন্দ লাগছে। এবার আমার ছেলমেয়ে নতুন জামা পরে ঈদ করতে পারবে। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।’

আয়োজনটি ঘিরে রমজান মাসজুড়ে ছিল বন্ধুদের ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রচার সম্পাদক মেধা সবার বাড়ি গিয়ে শিশুদের জামার মাপ নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘মানবিক এই কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকতে পেরে ভালো লাগছে। বাচ্চাদের মাপ নেওয়ার সময় ওদের খুশি দেখে মনটা ভরে গেছে।’

প্রতিদিন প্রথম আলোর ভৈরব আঞ্চলিক অফিসে সহমর্মিতার ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত থাকেন বন্ধুরা। কেউ জামা ভাঁজ করতেন, কেউ টোকেন বের করে হিসাব মেলাতেন। পরে সবাই মিলে চলে যেতেন বাজারে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকি এ দিনটার জন্য। শিশুদের নতুন জামা উপহার দিতে খুব ভালো লাগে।’

ঈদ সালামির আনন্দ যোগ করতে শিশুদের নতুন নোট দেওয়া হয়
ছবি: জিসান খান

বন্ধুদের মতো অপেক্ষায় থাকে সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও তাদের পরিবার। রমজান মাসের শুরুতেই পাশের বন্ধুদের নিকট তাদের প্রশ্ন, ‘এবার নতুন জামা কখন দিবে?’ ৫ বছরের সাদিয়ার আবদার ‘এবার আমাকে কিন্তু একটা লাল রঙের জামা দিবেন।’

ঈদ সালামির আনন্দ যোগ করতে ভৈরব বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি রকিবুল হাসান নতুন নোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। নতুন জামা আর চকচকে নোট পেয়ে প্রতিটি শিশুর মুখে ছিল আনন্দের ঝলকানি। উপদেষ্টা ওয়াহিদা আমিন বলেন, ‘ঈদে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে বেশ কয়েক বছর ধরেই জাতীয় পর্ষদের ঘোষণা অনুযায়ী ভৈরব বন্ধুসভা এ কর্মসূচি পালন করে আসছে। বন্ধু ও বন্ধুসভার শুভানুধ্যায়ীদের দেওয়া অর্থ দিয়ে কেনা হয় নতুন জামা ও ঈদ খাদ্যসামগ্রী। তোমাদের এ আয়োজনটি আমার বেশ পছন্দের।’

কর্মসূচির সূচনা পর্বে ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুমন মোল্লা, আলাল উদ্দিন, লুবনা হক, জাহিদুল হক, জনি আলম, আসাদুজ্জামান সোহেল, সভাপতি নাহিদ হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য ইকরাম বখশ, আফিসা আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, এরফান হোসেন, অর্থ সম্পাদক মানিক আহমেদ, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সাঈফ রহমান, জেন্ডার ও সমতা সম্পাদক তানশি নাহার, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক সন্দ্বীপ পাল, দপ্তর সম্পাদক আনাস খান, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক রাসেল রাজ ঈদ শুভেচ্ছা জানান।

সাধারণ সম্পাদক রিফাত হোসেন বলেন, মানবিক এই কর্মসূচি নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে জাগরণ তৈরি হয়। ছোট ছোট অংশগ্রহণে দিন শেষে বড় একটি আয়োজনের রূপ পেয়েছে। অর্থ ও শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করে কর্মসূচিকে সফল করায় তিনি সব বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সভাপতি নাহিদ হোসাইন বলেন, ‘ঈদ আর নতুন জামা এক মুদ্রার এপিঠ–ওপিঠ। ২০১৭ সাল থেকে কাজটির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছি। নতুন জামা পেয়ে শিশুদের আনন্দ আমাকে তৃপ্তি দেয়।’

কার্যনির্বাহী সদস্য, ভৈরব বন্ধুসভা