প্রথম আলো সর্বত্রই মানুষের সঙ্গে মিশে গেছে। কেন যেন পত্রিকাটি সবকিছুর থেকে আলাদা। বাংলাদেশের গণমানুষের স্বার্থে পত্রিকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। পত্রিকাটি জন্মলগ্ন থেকে গণমাধ্যমের ভূমিকা ছাড়াও শিক্ষা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানা ক্ষেত্রে জড়িয়ে রয়েছে। এককথায় বলতে গেলে, বাংলাদেশের স্বার্থে সত্য প্রকাশের জন্য প্রথম আলোকে টিকে থাকতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে অনেক প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যা মোকাবিলা করতে হলে সত্য প্রকাশের বিকল্প নেই। প্রথম আলোকে সেই সত্যবাণী সাহসিকতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে।
প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২ ডিসেম্বর বিকেলে মাদারীপুর পৌরসভার সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। সমাবেশে শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, নারী উদ্যোক্তা, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নিয়ে প্রথম আলো সম্পর্কে খোলামেলা মতামত ব্যক্ত করেন।
বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সুধী সমাবেশ। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর মাদারীপুর প্রতিনিধি অজয় কুন্ডু। সঞ্চালনা করেন মাদারীপুর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমান জুলিয়া। অনুষ্ঠানে সহায়তা করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।
সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশ করায় রোজ প্রথম আলোতে চোখ রাখেন মাদারীপুর-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহগণশিক্ষা-বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো আমার কাছে প্রথম পছন্দের গণমাধ্যম। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত প্রথম আলোর সঙ্গে আছি। আমরা বিশ্বাস করি—যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে প্রথম আলো। বাসায় রোজ প্রথম আলো পড়ি। প্রথম আলো বাংলাদেশের মানুষের ও সমাজের ধর্মীয় ও মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রথম আলোর কাছে সমাজের একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের চাহিদা অনেক। বাংলাদেশের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ আসছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য প্রথম আলো ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।’
প্রশ্নোত্তর পর্বে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাহান্দার আলী জাহান বলেন, ‘গত সরকারের সময় আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে প্রথম আলো নানা ধরনের দুর্নীতির আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে, বর্তমানে প্রথম আলো তাঁকে কীভাবে দেখছে?’
এ প্রশ্নের জবাবে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘প্রথম আলো সব সময় সত্য তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করেছে। যখন তারেক রহমানকে আদালত নির্দোষ প্রমাণ করল, সেটাও প্রথম আলো প্রকাশ করেছে।’
সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘প্রতিটি দেশের গণমাধ্যম কতটুকু সত্য বলতে পারে তা নির্ভর করে ওই দেশের নাগরিকদের গণতন্ত্রের চর্চার ওপর। আমরা কী সব বলতে পারি? সব বলতে পারি না। তবে আমরা যতটুকু সত্য বলতে পারি, তা অন্য কোনো গণমাধ্যম বলতে পারে না। তবু কাজ করতে গিয়ে আমাদের ভুল হয়। সেই ভুল স্বীকারও আমরা করি। এ ছাড়া প্রথম আলোর ওয়েবে ধর্ম বলে একটি সাইট আছে। সেখানেও ধর্ম নিয়ে হাজার হাজার লেখা আছে। যারা ধর্ম নিয়ে অভিযোগ করেন, তা আসলে সঠিক নয়।’
এ ছাড়া প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক নেয়ামতউল্লাহ, সাংবাদিক রিপন চন্দ্র মল্লিক, আবৃত্তি ও উপস্থাপনা সংগঠক শাহাদাত হোসেন লিটন, শিল্পকলা একাডেমির নাট্য প্রশিক্ষক আ জ ম কামাল, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি খান মো. শহীদ, শিক্ষক মাহাবুব হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক আসাদুজ্জামান সাইফ প্রমুখ।
প্রথম আলো সম্পর্কে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান মজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রথম আলো যখন থেকে যাত্রা শুরু করে তখন থেকেই বাসায় প্রথম আলো রাখি। রোজ প্রথম আলো না পড়লে অপূর্ণতা থেকে যায়। কারণ, প্রথম আলো পড়ে আমরা বিশেষ কিছু পাই। প্রথম আলো যেমন মেধাবী তরুণদের নিয়ে কাজ করে, তেমনি অবহেলিত মানুষদের জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে বিশেষ অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।’
মাদারীপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি এনায়েত হোসেন বলেন, ‘গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ। তাই সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রথম আলো পালন করবে, সেই প্রত্যাশা রাখি।’
দেশের রাজনৈতিক নানা সমীকরণ ও পটপরিবর্তনের মধ্যেও প্রথম আলোর সদা সত্য ও সাহসী সংবাদ প্রকাশের ধারা ধরে রাখায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন মাদারীপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক হিতেন চন্দ্র মন্ডল, মাদারীপুর সরকারি ইউনাইটেড ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মহাদেব বর্মন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অনুসন্ধান) জাহাঙ্গীর আলম, নূরজাহান সেলিম নিরাময় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. গোলাম সরোয়ার, আচমত আলী খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ন কবির, প্রথম আলো ও জেলা সংবাদপত্রের এজেন্ট ওমর আলী শিকদার প্রমুখ।
মাদারীপুর পৌরসভার প্রশাসক ও মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আল নোমান বলেন, ‘প্রথম আলো একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রথম আলোকে টিকে থাকা দরকার।’
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা চিকিৎসক অখিল সরকার ও কুমার লাভলু, বন্ধুসভার সদস্য এইচ এম হাবিবুর রহমান, আরিফুর রহমান, আল শাহরিয়াত করিম, তরিকুল ইসলাম, দিয়া ইসলাম, রাসেল শিকদার, সৈকত হোসেন, সোহাগ হাসান, সোহাগ ব্যাপারী, দিপংকর সাহা, উত্তম দাশ প্রমুখ।
বন্ধু, মাদারীপুর বন্ধুসভা