দিনটি ছিল ২৬ আগস্ট। মেঘলা আকাশ, মাঝেমধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছিল। এমন আবহাওয়ার মধ্যেও গোয়ালন্দ বন্ধুসভার কর্মকাণ্ড থেমে নেই। গোয়ালন্দ শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লিতে গড়ে ওঠা ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর’-এ বন্ধুসভার বন্ধুরা আয়োজন করেন পাঠচক্র অনুষ্ঠানের। পাশাপাশি কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা প্রদান, কবিতা আবৃত্তি, গান এবং সবশেষে বৃক্ষ রোপণ করা হয়।
গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের কাশিমা গ্রামে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা গিয়াস ব্যক্তি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। এদিন বিকেল চারটায় বন্ধুসভার উদ্যোগে ওই জাদুঘর চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় মাসিক পাঠচক্র অনুষ্ঠান। শুরুতে উপস্থিত সবাই সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। পরে সাধারণ সম্পাদক শফিক মন্ডল সবার উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস–সম্পর্কিত বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা গিয়াস রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস, রাজবাড়ী জেলা’ নামক বইটি সবাই পর্যায়ক্রমে পাঠ করে শোনান। পাঠ শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা গিয়াস বন্ধুদের উদ্দেশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করেন। এ ছাড়া তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর স্মৃতিচারণায় ২০০৬ সালে তাঁর রচিত ‘রক্ত খসড়া পংক্তি’ নামক বইটি পাঠ করে শোনান। পাঠচক্র শেষে বন্ধুরা কবিতা আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করেন।
এরপর গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ বাবর আলীর জ্যেষ্ঠ সন্তান সামিয়া সুলতানা এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ায় তাকে বন্ধুসভার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। শেষে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর চত্বরে একটি ফলদ গাছ রোপণ করা হয়।
গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সহসভাপতি জীবন চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন, প্রথম আলোর প্রতিনিধি এম রাশেদুল হক, গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ বাবর আলী, প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি কে এম বেলায়েত হোসেন, গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সহসভাপতি ডা. জাকির হোসেন, শামসুল হক, সাধারণ সম্পাদক শফিক মন্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মইনুল হক মৃধা, এমদাদুল হক পলাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজা বিশ্বাস, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মুহাম্মদ মাহিমুজ্জামান, দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ন আহমেদ, প্রচার সম্পাদক শরীফুল ইসলাম, বইমেলা সম্পাদক জালাল উদ্দিন বিশ্বাস, বন্ধু জহির রায়হান, আফজাল হোসেন, শিক্ষক পরিতোষ চক্রবর্তীসহ অন্য বন্ধুরা।
এমন আয়োজন নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা গিয়াস বলেন, ‘যা কিছু ভালো তার সঙ্গে প্রথম আলো। আজও প্রমাণ করে দিল গোয়ালন্দ বন্ধুসভা। এই মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর নিয়ে প্রথম দিকে প্রথম আলো প্রতিবেদন তুলে ধরেছিল। এরপর একে একে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত হয়। বন্ধুসভার এমন আয়োজনে আমি খুবই সন্তুষ্ট। সুযোগ পেলে তাদের সব ভালো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকব।’
বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক শফিক মন্ডল বলেন, ‘ভালোর সাথে, আলোর পথে—স্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা মাসিক পাঠচক্র, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিসহ নিয়মিত সব কাজ পালনের চেষ্টা করছি। বৈরী আবহওয়ার মধ্যেও সবার উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে অনেক প্রাণবন্ত করে তুলেছে।’