বাংলা কবিতায় পল্লিজীবনের আবেগ, সরলতা ও মানবিক বোধের অনন্য রূপ প্রকাশ করেছেন পল্লিকবি জসীমউদ্দীন। তাঁর রচিত শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোর অন্যতম ‘কবর’, যা শতবর্ষ অতিক্রম করেও আজও পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৫ সালে, গ্রাম্য কবিতা পরিচয়ে কল্লোল পত্রিকার তৃতীয় বর্ষের তৃতীয় সংখ্যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯২৭ সালে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালী’-তে অন্তর্ভুক্ত হয়।
ষাণ্মাত্রিক মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত এই কাহিনিকবিতায় এক গ্রামীণ বৃদ্ধের জীবনের চরম বেদনা ফুটে উঠেছে। প্রিয়জনদের একে একে হারানোর যন্ত্রণা কবি জসীমউদ্দীন অনন্য মর্মস্পর্শী ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। ১১৮ চরণবিশিষ্ট দীর্ঘ এই কবিতা মূলত এক শোককবিতা, যার অন্তর্লয়ে প্রবাহিত হয়েছে ভালোবাসা, মৃত্যুচেতনা ও একাকিত্বের অনুরণন।
৭ অক্টোবর বিকেলে কবি জসীমউদ্দীনের এই কালজয়ী কবিতা ‘কবর’ নিয়ে পাঠচক্রের আসর করেছে ময়মনসিংহ বন্ধুসভা। নগরীর গাঙ্গিনারপাড় ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরের প্রথম আলো ময়মনসিংহ কার্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
শুরুতে সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান কবিতার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও সামাজিক তাৎপর্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘জসীমউদ্দীন গ্রামীণ মানুষের বেদনা ও মর্মস্পর্শী অনুভূতিকে সরল ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন। “কবর” কেবল ব্যক্তিগত শোক নয়; এটি মৃত্যুচেতনার সঙ্গে মানবিক প্রেম ও একাকিত্বের মিশেলে এক অদ্ভুত করুণা জাগায়।’
উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই কবিতায় পল্লিজীবনের সাধারণ মানুষের হৃদয়ের গভীর বেদনা যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি জীবনের অসহায়তা ও মৃত্যুর স্বাভাবিকতাও কবি অনবদ্যভাবে বিন্যস্ত করেছেন।’
সভাপতি মোহাম্মদ খালিদ হাসান বলেন, ‘“কবর” শুধু একটি কবিতাই নয়, এটি বাঙালির অন্তরঙ্গ জীবনের প্রতিচ্ছবি। এখানে মাটির গন্ধ, ভালোবাসার দীর্ঘশ্বাস আর মৃত্যুর অনিবার্যতা একাকার হয়ে গেছে। শতবর্ষ পেরিয়েও এই কবিতা আজও আমাদের চোখে জল আনে, হৃদয়ে আলো জ্বালে।’
পাঠচক্র শেষে কবিতাটি আবৃত্তি করেন বন্ধু বোরহান উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্ধু উজ্জল মিয়া, সাদমান হাসান, ফারদিন অভি, শাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।
সভাপতি, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা