পাহাড় ও প্রকৃতিতে হাজারো স্মৃতির মেলা

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মাধবপুর লেকে সিলেট বন্ধুসভার বন্ধুরাছবি: বন্ধুসভা

ভ্রমণ বরাবরই মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। ঘুরতে গেলে মানুষ ফুরফুরে হয়ে যায়। শরীর ও মন দুটির জন্যই ভ্রমণ দরকার।

গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫ দিনব্যাপী বইমেলা ও গণিত অলিম্পিয়াডের পর বন্ধুদের একটুখানি প্রশান্তি দরকার ছিল। একের পর এক কাজে সবাই ভীষণ ক্লান্ত। সেই ক্লান্তিভাব দূর করতে সিদ্ধান্ত হয় এক দিনের ভ্রমণে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মাধবপুর লেকে যাওয়ার।

যেই ভাবা, সেই কাজ। শুরু হলো প্রস্তুতি। বাসভাড়া করা, টাকা তোলা ও খাবারের বন্দোবস্ত—একেক করে সবকিছু ঠিক করা হলো। সবার আগ্রহ থাকায় প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি হয়নি। দেখতে দেখতে এসে যায় নির্ধারিত দিন, ১ মার্চ। বন্ধুরা সকাল আটটায় নির্ধারিত জায়গায় চলে আসেন এবং সকাল ৯টায় সিলেট থেকে বাস ছেড়ে যায়। রাস্তার দুই পাশে সবুজ বৃক্ষরাজি যেন আমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।

সকালে সবার জন্য বাসেই হালকা নাশতার ব্যবস্থা রাখা হয়। নাশতার পর চলতে থাকে গান, নাচ ও আড্ডা। কখন যে পথ শেষ হয়ে যায়, খোঁজও পায়নি। তখন বেলা সাড়ে ১১টা। আমাদের বহনকারী বাসটি মাধবপুর লেকে পৌঁছায়। তারপর সবাই একসঙ্গে মিলে পাহাড় দেখা ও ছবি তোলা। মনোমুগ্ধকর ছিল পাহাড়ের ওপর বসে বন্ধুরা মিলে গানের আড্ডায় মেতে ওঠা। পাহাড়ে বসে প্রকৃতি দেখতে দেখতে ‘চলো দোতং পাহাড়’ গানে কণ্ঠ মেলায় সবাই।

রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে আগেই দুপুরের জন্য খাবার সংগ্রহ করে রাখা হয়েছিল। আয়োজনে ছিল ভাত, ডাল ও মুরগির মাংস। মধ্যাহ্নভোজ শেষে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর বিকেল চারটায় আবারও সবাই বাসে উঠে পড়েন। ফেরার সময় যে হয়ে গেছে। ফিরতি পথে রাস্তায় কিছুক্ষণের জন্য চা–বিরতি নেওয়া হয়। চা খেতে খেতে বিকেলের দৃশ্য উপভোগ করা, প্রকৃতির বুকে সূর্যাস্ত দেখার মতো শান্তি আর হয়তো কিছুতে নেই। বাসে উঠে সবাই আবার মেতে ওঠে আনন্দ–আড্ডায়।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মাধবপুর লেকে সিলেট বন্ধুসভার বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

রাতের রাস্তায় বাসে ভ্রমণ সত্যিই অসাধারণ। সবাই হইচই করলেন। কিছুটা ক্লান্তি ও আনন্দঘন দিন ফেলে আসার কষ্ট, তাই অনেকেই একটু চুপচাপ। খুব অল্প সময়েই যেন পথটুকু ফুরিয়ে গেল। নাম না–জানা পাহাড়, চা–বাগান, শাপলা ও বিকেলের সূর্যাস্ত আর অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য পড়ে রইল পেছনে। কেবল সাক্ষী হলো হাজারো স্মৃতির মেলা।

সারা দিন পাহাড় ও চায়ের রাজ্যে হইহুল্লোড়, আনন্দ ও গানবাজনার পর রাত সাড়ে আটটার দিকে বাস পৌঁছায় সিলেটে। তারপর যে যাঁর বাসায় ফিরে যান। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হলো একটি সুন্দর দিনের।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা