বৃদ্ধ রিকশাচালক আইনুল হকের একটা স্বপ্নপূরণ

রিকশাচালক আইনুল হকের (মাঝে) সঙ্গে বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

ব্যাটারিচালিত রিকশা আর ইজিবাইকের দাপটের যুগেও ময়মনসিংহ নগরে এখনো হাতে গোনা কিছু পেডেলচালিত রিকশা আছে। পেডেলচালিত এ রিকশাগুলো অঘোষিতভাবেই বৃদ্ধ চালকের জন্য ‘সংরক্ষিত’ থাকে। বৃদ্ধ চালকেরা রিকশাগুলো চালান। তাঁরা শহরের ব্যস্ত এলাকাগুলোতে যেতে সাহস পান না। বেশির ভাগ বৃদ্ধ চালক নগরের বিভিন্ন বাজারে প্রবেশের মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। বাজার শেষে ভারী ব্যাগ বহন করা ব্যক্তিদের অল্প দূরত্বের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে থাকেন তাঁরা। এভাবে সারা দিনে কারও ৩০০ টাকা আবার কারও ৫০০ টাকা রোজগার হয়।

ময়মনসিংহ নগরের সানকিপাড়া বাজারে প্রবেশের দুটি পথে প্রতিদিন সকাল থেকেই তাঁদের দেখা যায়। বেশির ভাগের বয়স ৬০–এর বেশি। প্রায় সবাই গ্রাম থেকে শহরে এসে রিকশা চালিয়ে রাতে আবার বাড়ি ফিরে যান। তাঁদের জীবনের গল্পে রয়েছে নানা আক্ষেপ আর স্বজনহীনতার কথা। ৩ নভেম্বর সকালে এমন একজন চালক আইনুল হকের সঙ্গে কথা বলেন ময়মনসিংহ বন্ধুসভার বন্ধুরা। প্রথম আলোর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি করে ভালো কাজের’ অংশ হিসেবে সানকিপাড়া বাজারে থাকা বৃদ্ধ রিকশাচালক ও ভিক্ষুকদের এক দিনের স্বপ্ন পূরণ করার উদ্দেশ্যে সেখানে যান।

বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুনকেও বাজার করে দেন বন্ধুরা
ছবি: বন্ধুসভা

আইনুল হককে দেখেই খুব অসহায় আর দুর্বল মনে হওয়ায় বন্ধুরা তাঁর কাছে এগিয়ে যান। ভালো-মন্দ জানতে চাইলে আইনুল হক প্রথমেই কেঁদে ফেলেন। বলেন, আগের দিন দুপুরে ভাত খেয়েছিলেন। এরপর আর কিছু খাননি। আইনুল হকের বয়স প্রায় ৭০ বছর। তাঁর বাড়ি মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে। এক ছেলে রিকশা চালান নারায়ণগঞ্জে। আইনুলের স্ত্রী বর্তমানে সেখানে থাকায় তিনি বাড়িতে একা। যে কারণে বাড়িতে রান্না না হওয়ায় রাতে খেতে পারেননি। আইনুল হক আরও জানান, প্রতিদিন মুক্তাগাছা থেকে ময়মনসিংহে গিয়ে রিকশা চালান। পেডেলচালিত রিকশার দৈনিক ভাড়া বাবদ দিতে হয় ৬০ টাকা। আসা–যাওয়ার খরচ আর দুপুরে খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ টাকা থাকে। এ দিয়ে কোনোরকমে চলে সংসার। এক দিন রিকশা না চালালে সেদিনের খাবার জোটে না। আইনুল হক বন্ধুদের জানান তাঁর একটি স্বপ্নের কথা। রিকশা না চালিয়ে এক দিন আরাম করে খেতে চান তিনি।

আইনুল হকের এ স্বপ্ন পূরণ করেছে ময়মনসিংহ বন্ধুসভা। সকালে বন্ধুসভার দুজন বন্ধু আইনুল হকের রিকশাটি ৬০ টাকা জমা দিয়ে গ্যারেজে ফেরত দিয়ে আসেন। পরে একটি রেস্তোরাঁয় তাঁকে খাওয়ানো হয়। পরে তাঁকে কিছু বাজার করে এবং শ্বাসকষ্টের ওষুধ কেনার জন্য এক হাজার টাকা দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার গাড়িতে তুলে দেন।
আইনুল হকের এক দিনের স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি সানকিপাড়া বাজারে কাজ করা নারী রাবেয়া খাতুনকেও বাজার করে দেন বন্ধুরা। রাবেয়া খাতুনের বয়স ৬৫। সাত বছর বয়সী এক নাতি ছাড়া তাঁর আর কেউ নেই। বাজার পেয়ে রাবেয়া খাতুনও খুব খুশি হন।
ময়মনসিংহে বন্ধুসভার একটি করে ভালো কাজ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি সাদিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান, কার্যনির্বাহী সদস্য রাবেয়াতুল বুশরা, ম্যাগাজিন সম্পাদক সুলায়মান শিহাব ও বন্ধু আলমাস হোসাইন।